14 - Ibrahim ()

|

(1) আলিফ-লাম-রা। এই কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার (কুফরী) থেকে আলোর (ঈমানের) দিকে, পরাক্রমশালী সর্বপ্রশংসিত আল্লাহ পথে বের করে আনতে পারো।

(2) তিনি আল্লাহ, আসমানসমূহ ও জমিনের সব কিছুই তাঁর মালিকানায় এবং কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির দুর্ভোগ।

(3) যারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাত থেকে অধিক পছন্দ করে, আর আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং তার মধ্যে (সন্দেহ, বিকৃতি, সত্যবিমুখতা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে) বক্রতার সন্ধান করে; মূলত তারা (এ ধরনের লোকেরা ) ঘোরতর ভ্রষ্টতায় (নিমজ্জিত) রয়েছে।

(4) আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে (আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে আসা বিধি-বিধান) পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে। সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(5) আর আমি মূসাকে আমার আয়াতসমূহ দিয়ে (রাসূল হিসেবে) পাঠিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম যে, ‘তুমি তোমার সম্প্রদায়কে (কুফরি ও মূর্খতার) অন্ধকার থেকে (ঈমান ও জ্ঞানের) আলোর দিকে বের করে আনো এবং আল্লাহর (নি‘আমতপূর্ণ) দিবসসমূহ তাদের স্মরণ করিয়ে দাও।’ নিশ্চয় এতে প্রতিটি ধৈর্যশীল, পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য রয়েছে অসংখ্য (শিক্ষণীয়) নিদর্শন।

(6) আর (হে রাসূল! স্মরণ করো সে সময়ের কথা) যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমাদের প্রতি আল্লাহর নি‘আমত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদেরকে ফির‘আউন গোষ্ঠীদের কবল থেকে রক্ষা করেছেন, তারা তোমাদের নিকৃষ্ট (ও জঘন্য) শাস্তি দিত। আর তারা তোমাদের ছেলেদেরকে যবহ করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখতো।(১) আর তাতে ছিল তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (ধৈর্যের) মহা পরীক্ষা।’

(7) আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন: ‘যদি তোমরা (নি‘আমতসমূহের) শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (আরো নি‘আমত) বাড়িয়ে দিবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, (তবে জেনে রাখো,) নিশ্চয় আমার শাস্তি বড় কঠিন।’

(8) আর মূসা (তার জাতিকে) বললো: ‘(হে আমার জাতি!) যদি তোমরা ও জমিনের সকলে কুফরী করো,(১) তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, সর্বপ্রশংসিত।’ (২)

(9) (হে কাফিররা!) তোমাদের কাছে কি তোমাদের পূর্বের লোকদের সংবাদ পৌঁছেনি? নূহ, আদ ও সামূদ জাতির এবং তাদের পরে যে জাতিসমূহ এসেছে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাদের রাসূলগণ তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিল; কিন্তু তারা তাদের হাত (ক্রোধে আঙুল কামড়াতে কামড়াতে) নিজেদের মুখে চেপে ধরেছিল এবং বলেছিল: ‘নিশ্চয় তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছো, তার প্রতি আমরা কুফরী করলাম। আর তোমরা আমাদের (ঈমান ও তাওহীদের) যে বিষয়ের প্রতি দা‘ওয়াত দিচ্ছো, সে বিষয়ে আমরা ঘোর সন্দেহে রয়েছি।’

(10) তাদের রাসূলগণ (তখন) বলেছিল: ‘আল্লাহর সম্পর্কেও তোমাদের সন্দেহ? অথচ তিনিই আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করার জন্যে আহ্বান জানান এবং তিনি (দুনিয়ার জীবনে) একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেন।’ তারা বললো: ‘তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ, আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ‘ইবাদাত করত, তোমরা তাদের ‘ইবাদাত হতে আমাদেরকে ফিরাতে চাও। অতএব তোমরা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ (মু‘জিযা) নিয়ে আসো।’

(11) তাদের রাসূলগণ (তখন) তাদেরকে বললো: ‘আমরা অবশ্যই তোমাদের মতই মানুষ(১); কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা (তাকে রাসূল হিসেবে মনোনীত করে) অনুগ্রহ করেন। আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে প্রমাণ নিয়ে আসার সাধ্য আমাদের নেই। আর মু’মিনদের কেবল আল্লাহর ওপরই তাওয়াক্কুল করা উচিত।’

(12) ‘আর আমরা কেন আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব না? অথচ তিনিই আমাদেরকে আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। আর তোমরা আমাদের (মিথ্যারোপ ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের মাধ্যমে) যে কষ্ট দিচ্ছ, আমরা তার ওপর অবশ্যই ধৈর্যধারণ করব। আর আল্লাহর ওপরই যেন তাওয়াক্কুলকারীরা (ভরসাকারীরা) তাওয়াক্কুল করে।’

(13) আর কাফিররা তাদের রাসূলদেরকে বললো: ‘অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে আমাদের ভূ-খণ্ড থেকে বের করে দেব, অথবা তোমাদেরকে অবশ্যই আমাদের ধর্মে ফিরে আসতে হবে।’ অতঃপর তাদের (রাসূলদের) রব তাদের নিকট এ মর্মে অহী পাঠালেন: ‘আমি অবশ্যই (কুফরিতে লিপ্ত) যালিমদের ধ্বংস করে দিবো।’

(14) ‘আর নিশ্চয় আমি তাদের (ধ্বংসের) পর তোমাদেরকে (রাসূলগণ ও মু’মিনদেরকে) জমিনে বসবাস করতে দেব। এটা তার জন্য, যে আমার অবস্থানকে(১) ভয় করে এবং ভয় করে আমার শাস্তিকে।’

(15) আর তারা (রাসূলগণ) বিজয় কামনা করলো। আর (বিজয় লাভের পরিবর্তে) ব্যর্থ হল, সকল স্বেচ্ছাচারী, হঠকারী।

(16) (পরিণামে ) এর (দাম্ভিকের) সামনে(১) ( অপেক্ষমাণ ) রয়েছে জাহান্নাম। আর সেখানে তাদের পান করানো হবে গলিত পুঁজ থেকে।

(17) (তীব্র পিপাসায় ) সে তা (পুঁজ-পানিই ) গিলতে চাইবে এবং (অতি তিক্ততা, গরম ও গন্ধের কারণে) তা গিলা মোটেও তার জন্য সহজ হবে না। আর তার কাছে চতুর্দিক থেকে মৃত্যু ধেয়ে আসবে; অথচ সে কখনো মরবে না। আর এরপরেও তার জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি।

(18) যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করে তাদের আমলসমূহের দৃষ্টান্ত হলো এমন ছাইয়ের মত, প্রবল ঘুর্ণিঝড়ের দিনে বাতাস প্রচণ্ড বেগে যা বহন করে নিয়ে যায়। তারা যা অর্জন করেছে, তার মাধ্যমে (কিয়ামতের দিনে) কিছুই করতে পারবে না। এ তো ঘোরতর (সুদূরপ্রসারী ) ভ্রষ্টতা।

(19) (হে মানুষ!) তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ আসমানসমূহ এবং জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে? তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করতে পারেন এবং অস্তিত্বে আনতে পারেন নতুন সৃষ্টি।(১)

(20) আর এটা আল্লাহর জন্য মোটেই কঠিন নয়।

(21) আর তারা সবাই (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। অতঃপর যারা দাম্ভিকতা ও অহংকার করেছে দুর্বল অনুসারীরা তাদেরকে বলবে: ‘(হে নেতৃবর্গ!) নিশ্চয় আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম। সুতরাং তোমরা কি আল্লাহর শাস্তি থেকে আমাদেরকে কিছুটা রক্ষা করতে পারবে?’ তারা বলবে: ‘যদি আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতেন, তবে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম।(১) এখন আমরা অস্থির হই কিংবা ধৈর্যধারণ করি, উভয় অবস্থাই আমাদের জন্য সমান, আমাদের (শাস্তি থেকে) পালানোর কোনো জায়গা নেই।’

(22) আর যখন বিচারের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে (জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে), তখন শয়তান বলবে: ‘নিশ্চয় আল্লাহ তো তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি, আর আমিও তোমাদেরকে (এটা-সেটা) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন আমি তা ভঙ্গ করলাম। তোমাদের ওপর আমার কোনো আধিপত্য ছিল না। আমি তোমাদেরকে দা‘ওয়াত দিয়েছি, আর তোমরা আমার দা‘ওয়াতে (নিজে থেকেই) সাড়া দিয়েছ। সুতরাং তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করো না; বরং নিজেদেরকেই ভর্ৎসনা করো। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই, আর তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। ইতঃপূর্বে তোমরা আমাকে যার (আল্লাহর) সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয় আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় (দুনিয়াতে শিরক ও কুফরিকারী) যালিমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’

(23) আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশে নদ-নদী-ঝরনাসমূহ প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে তাদের রবের অনুমতিক্রমে চিরস্থায়ী হবে। সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।

(24) (হে রাসূল!) তুমি কি দেখো না, আল্লাহ কীভাবে উপমা পেশ করেছেন? কালিমা তায়্যিবাহ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), যা একটি পবিত্র (উৎকৃষ্ট) বৃক্ষের ন্যায়, যার মূল সুদৃঢ় আর শাখা-প্রশাখা আকাশে।(১)

(25) সেটি (এ পবিত্র বৃক্ষটি) তার রবের অনুমতিতে সব সময় ফল দান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য নানা দৃষ্টান্ত প্রদান করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।

(26) আর অপবিত্র বাক্যের (শিরকের) উপমা নিকৃষ্ট (তিক্ত ফলের) বৃক্ষের ন্যায়, যাকে মাটির ওপর থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয়েছে, যার কোনো স্থিতি নেই।(১)

(27) আল্লাহ ঈমানদারদেরকে দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুদৃঢ় বাণী (কালিমায় তায়্যিবাহ দ্বারা অবিচল রাখেন। আর আল্লাহ যালিমদের পথভ্রষ্ট করেন। বস্তুত, আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।

(28) (হে রাসূল!) তুমি কি তাদেরকে দেখো না, যারা আল্লাহর নি‘আমতকে কুফরী দ্বারা পরিবর্তন করেছে(১) এবং তাদের জাতিকে ধ্বংসের ঘরে (দ্বারপ্রান্তে) নামিয়ে দিয়েছে?

(29) জাহান্নামে(১), যাতে তারা দগ্ধ হবে, আর তা কতইনা নিকৃষ্ট অবস্থান!

(30) আর তারা (মুশরিকরা) আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করে, যেন তারা (মানুষকে) আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করতে পারে। (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘তোমরা (দুনিয়ার জীবনে কিছুটা) ভোগ করতে থাকো। কেননা, তোমাদের গন্তব্য তো (জাহান্নামের) আগুনের দিকে।’

(31) (হে রাসূল! তুমি) আমার ঈমানদার বান্দাদের বলো: ‘তারা যেন সালাত কায়িম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে, ঐ দিন আসার পূর্বে যে দিন (আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য) কোনো বেচা-কেনা থাকবে না এবং থাকবে না বন্ধুত্বও।

(32) আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, ফলে তা দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-ফলাদি উৎপাদন করেন এবং তিনি নৌযানকে তোমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে তা চলাচল করে এবং নদীসমূহকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন।

(33) আর তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন, যারা অবিরাম একই নিয়মে চলে এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে।(১)

(34) আর তোমরা তাঁর কাছে যা চেয়েছ (এবং যা চাওনি), তার প্রত্যেকটি থেকে তিনি তোমাদের দিয়েছেন। আর যদি তোমরা আল্লাহর নি‘আমত গণনা করো, তবে কখনো তার সংখ্যা গুনে নিরূপণ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অতি মাত্রায় যালিম, (আল্লাহর নি‘আমত উপভোগে) অকৃতজ্ঞ।

(35) আর (হে রাসূল! তুমি) সে সময়ের কথা স্মরণ করো যখন ইবরাহীম (তার সন্তান ও স্ত্রীকে মক্কায় বসবাস করতে দিয়ে) বললো: ‘হে আমার রব! আপনি এ শহরকে (মক্কাকে) নিরাপদ (ও শান্তিময়) করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন।’

(36) ‘হে আমার রব! নিশ্চয় এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে।(১) সুতরাং যে ব্যক্তি (আল্লাহর তাওহীদ ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে) আমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত, আর যে (আল্লাহর তাওহীদ ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে) আমার বিরুদ্ধাচরণ করবে, তবে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

(37) ‘হে আমাদের রব! নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে (ইসমা‘ঈল ও তার মাতা হাজরকে) ফসলহীন (অনুর্বর) উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম। হে আমাদের রব! যাতে তারা সালাত কায়িম করতে পারে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং ফল-ফলাদি থেকে তাদেরকে রিযক দান করুন, যাতে তারা (আপনার নি‘আমতের) কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে।’

(38) ‘হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনি জানেন, যা আমরা গোপন করি এবং যা প্রকাশ করি। আর আসমান ও জমিনে কোনো কিছু আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।’

(39) ‘সকল প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে (সন্তান হিসেবে) ঈসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব (তাঁর বান্দাদের) দু‘আ শ্রবণকারী।’

(40) ‘হে আমার রব! আমাকে সালাত কায়িমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের রব! আর আমার দু‘আ কবুল করুন।’

(41) ‘হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব কায়িম হবে, (কিয়ামতের) সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে(১) ও মু’মিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।’

(42) আর যালিমরা যেসব আমল করছে, আল্লাহকে তুমি সে বিষয়ে(১) মোটেই গাফিল (অমনোযোগী) মনে করো না। আসলে তিনি (আল্লাহ) তো তাদের অবকাশ দিচ্ছেন, ঐ দিন পর্যন্ত যেদিন (শাস্তির ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে ) চোখসমূহ পলকহীন তাকিয়ে থাকবে।

(43) (যখন মানুষ নিজেদের কবর থেকে দ্রুত উঠে আহ্বানকারীর দিকে ছুটবে, তখন) মাথা তুলে দৌড়াতে থাকবে, তাদের দৃষ্টি নিজেদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে শূন্য।(১)

(44) আর (হে রাসূল!) তুমি মানুষদেরকে সতর্ক করো, (কিয়ামত দিবসের) যেদিন তাদের ওপর শাস্তি নেমে আসবে। অতঃপর তখন যারা যুলম করেছে তারা বলবে: ‘হে আমাদের রব! (শাস্তি লাঘব করে) তুমি আমাদেরকে কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাও, আমরা তোমার ডাকে সাড়া দিবো এবং রাসূলদের অনুসরণ করব।’ (তখন তিরস্কার করে তাদেরকে এ উত্তর দেয়া হবে) ইতঃপূর্বে তোমরা কি (পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে) কসম করনি যে, তোমাদের কোনো পতন নেই?

(45) আর তোমরা বাস করছিলে সেসব লোকদের বাসভূমিতে, যারা (আল্লাহর সাথে কুফরী করে) নিজেদের ওপর যুলম করেছিল এবং তাদের সাথে আমি কীরূপ করেছি তা তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়েছিল। আর আমি তোমাদের (শিক্ষালাভের) জন্য অনেক দৃষ্টান্তও উপস্থাপন করেছি।

(46) আর তারা (মুহাম্মাদকে হত্যা ও তার দা‘ওয়াততে নিঃশেষ করতে) তাদের (সাধ্যানুযায়ী সর্বাত্মক) ষড়যন্ত্র করেছিল। আর আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে (ভালোভাবে) জানেন; যদিও তাদের ষড়যন্ত্র এমন ছিল যে, যাতে পাহাড় পর্যন্ত টলে যেতো।

(47) সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি কখনো আল্লাহকে তাঁর রাসূলদের (সাহায্য ও বিজয়ের) দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী মনে করো না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

(48) (হে রাসূল, তুমি তাদেরকে সেই দিনের ব্যাপারে সতর্ক করো ) যেদিন এ জমিন অন্য আরেকটি জমিনে রূপান্তরিত হবে এবং এ আসমানসমূহকে অন্য আসমানে রূপান্তরিত হবে, আর তারা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে।

(49) আর (হে রাসূল!) তুমি সে দিন (কাফির ও মুশরিক) অপরাধীদের একত্রে শিকলে বাঁধাবস্থায় দেখতে পাবে।

(50) তাদের (পরনের) পোশাকসমূহ হবে আলকাতরার এবং তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে আগুন।

(51) (এতা এ জন্য,) যাতে আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে তার কৃত (ভালো-মন্দ) আমলের (যথাযথভাবে) প্রতিদান দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।

(52) এটা (এ কুরআন) মানুষের জন্য একটি বার্তা। আর যাতে এটা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনিই কেবল এক সত্য ইলাহ, আর যাতে বুদ্ধিমানরা (এ থেকে) উপদেশ গ্রহণ করে।