(1) হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে) ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার।
(2) যেদিন তোমরা কিয়ামত দেখবে, সেদিন দেখতে পাবে যে, প্রত্যেক স্তন্য দানকারিণী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, ওপরন্তু তুমি দেখবে মানুষ মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয়। বরং আল্লাহর শাস্তি খুবই কঠিন।
(3) মানুষের মধ্যে কেউ কেউ কোন জ্ঞান ছাড়াই (মৃতদের পুনরুত্থানে আল্লাহর ক্ষমতার ব্যাপারে) আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে এবং সে অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের।
(4) তার (১) সম্পর্কে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, যে তার সাথে বন্ধুত্ব করবে সে অবশ্যই তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং তাকে প্রজ্বলিত আগুনের শাস্তির দিকে পরিচালিত করবে।
(5) হে মানুষ! তোমরা যদি পুনরুত্থান বিষয়ে (আল্লাহর ক্ষমতার ব্যাপারে) সন্দেহে থাক, তাহলে নিশ্চয় জেনে রেখো, আমিই তো তোমাদেরকে (১) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, তারপর(২) শুক্র থেকে, তারপর ‘আলাকাহ (জমাট রক্তপিণ্ড ) থেকে, তারপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট অথবা অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট গোশত (মুদ্গাহ ) থেকে। যাতে আমি তোমাদের নিকট (তোমাদেরকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করার আমার ক্ষমতার) বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করতে পারি। আর আমি যা (সৃষ্টি করতে ) ইচ্ছা করি, তা একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত মাতৃগর্ভে অবস্থিত রাখি। অতঃপর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, পরবর্তীতে যাতে তোমরা যৌবনে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু দেয়া হয় এ (অল্প ) বয়সেই, আবার কাউকে কাউকে ফিরিয়ে নেয়া হয় হীনতম বয়সে(৩), যাতে সে জ্ঞান লাভের পরও কিছু না জানে। (আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করে দেখ) তুমি জমিনকে দেখতে পাও শুষ্কাবস্থায়, অতঃপর যখনই আমি তাতে (বৃষ্টির) পানি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদ্গত করে সকল প্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ।
(6) এটি(১) এজন্য যে, নিশ্চয়ই আল্লাহই সত্য এবং তিনিই মৃতকে জীবন দান করেন এবং তিনিই সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
(7) আর (যেন তোমরা এ কথাও বিশ্বাস করো যে,) কিয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে কেনো সন্দেহ নেই। আর যারা কবরে আছে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন।
(8) আর মানুষের মধ্যে কতক কোনো জ্ঞান ছাড়াই কোনো হিদায়াত ছাড়াই (আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত) দীপ্তিমান কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে ।
(9) সে বিতর্ক করে ঘাড় বাঁকিয়ে, মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে। দুনিয়াতে তার জন্য রয়েছে, লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে দহনকারী আগুনের যন্ত্রণা আস্বাদন করাব।
(10) (সেদিন তাকে বলা হবে), ‘এ শাস্তি তোমার কৃতকর্মেরই ফল। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দাদের প্রতি যুলমকারী নন।’
(11) মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমন রয়েছে, যারা দ্বিধা-সন্দেহের সাথে আল্লাহর ইবাদাত করে। যদি তার কোনো কল্যাণ হয়, তবে সে তাতে প্রশান্ত হয়। আর যদি তার কোনো বিপর্যয় ঘটে, তাহলে সে তার আসল চেহারায় ফিরে যায়।(১) সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি হলো সুস্পষ্ট ক্ষতি।
(12) সে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছু (মূর্তি) কে ডাকে, যা (যেগুলোর বিরোধিতা) তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না এবং (সেগুলোর আনুগত্য) কোনো উপকারও করতে পারে না। এটিই চরম পথভ্রষ্টতা।
(13) সে (এ মূর্তিপূজারীরা) এমন কিছুকে ডাকে, যার ক্ষতি তার উপকার অপেক্ষা নিকটতর। কতই না নিকৃষ্ট এই অভিভাবক এবং কতই না নিকৃষ্ট এই সঙ্গী!
(14) নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।
(15) যে ধারণা করে যে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে কখনো তাকে (রাসূলকে) সাহায্য করবেন না, সে আসমানের দিকে একটি রশি প্রসারিত করুক,(১) এরপর (আকাশে উঠে ) তা কেটে দিক। তারপর সে ভেবে দেখুক, তার কৌশল তার আক্রোশের হেতু দূর করে কিনা?
(16) এভাবেই আমি সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে তা (আলকুরআন) নাযিল করেছি। আর আল্লাহ নিঃসন্দেহে যাকে ইচ্ছা, হিদায়াত দান করেন।
(17) নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইয়াহূদী হয়েছে, যারা সাবিঈ, খৃস্টান ও অগ্নিপূজক এবং যারা মুশরিক হয়েছে- কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবকিছুই সম্যক প্রত্যক্ষকারী।
(18) (হে রাসূল!) তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাজদা করে যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু রয়েছে জমিনে, সূর্য, চাঁদ, তারকারাজী, পর্বতমালা, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে। আবার অনেকের ওপর (কুফরীর কারণে) শাস্তি অবধারিত হয়ে আছে, ( ফলে তারা তাঁর জন্য সাজদা করে না। ) আল্লাহ যাকে অপমানিত করেন, তার সম্মানদাতা কেউ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।
(19) এরা দু’টি বিবদমান পক্ষ(১), যারা তাদের রব সম্পর্কে বিতর্ক করে। যারা কুফরী করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। আর তাদের মাথার ওপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি।
(20) যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে, তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে।
(21) আর তাদের জন্য থাকবে, লোহার হাতুড়ী।
(22) যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, প্রজ্বলিত আগুনের শাস্তি আস্বাদন করো।
(23) যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন , যার পাদদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। যেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে, সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা। আর যেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।
(24) তাদেরকে (দুনিয়ার জীবনে) পবিত্র বাণীর(১) দিকে পরিচালনা করা হয়েছিল এবং তাদেরকে মহা প্রশংসিত আল্লাহর পথ দেখানো হয়েছিল।
(25) নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে চলতে ও মসজিদে হারামে যেতে বাধা দেয়, যাকে আমি স্থানীয় ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান (মর্যাদার স্থান ) করেছি(১)। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যায়ভাবে সেখানে পাপ কাজ করতে চায়, তাকে আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাবো।
(26) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহীমকে সে ঘরের (বায়তুল্লাহর) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারী ও রুকূ-সাজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখবে(১)।
(27) আর তুমি মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে করে(১), তারা আসবে দুর দূরান্তের পথ অতিক্রম করে।
(28) যাতে তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে(১) উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিযক দিয়েছেন, তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে (যবহ করার সময় ) আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।(২) অতঃপর তোমরা তা থেকে (কুরবানি করা পশুর গোশত থেকে ) খাও এবং দুস্থ-দরিদ্রকে খেতে দাও।
(29) তারপর তারা যেনো নিজেদের শরীরের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়(১), তাদের মানতসমূহ পূরণ করে এবং প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে।’
(30) এটিই (হজ্জের) বিধান(১)। আর কেউ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র বিষয়সমূহকে সম্মান করে তার রবের নিকট তা-ই তার জন্য উত্তম। আর তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ জন্তু; তবে যা তোমাদের কাছে (আলকুরআন) তিলাওয়াত করে জানানো হয়েছে সেগুলো ছাড়া। সুতরাং মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাকো এবং মিথ্যা কথা পরিহার করো।
(31) (এ সব বিধান পালন কর) আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হয়ে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করে। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিংবা বাতাস তাকে দূরের কোনো জায়গায় নিক্ষেপ করলো।
(32) এটাই(১) হলো আল্লাহর বিধান। যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে(২) সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।
(33) এসব চতুষ্পদ জন্তুতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে, তারপর এগুলোর কুরবানীর স্থান হবে প্রাচীন ঘরের (কা‘বার) নিকট। (১)
(34) আর আমি প্রত্যেক জাতির জন্য কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিযক হিসেবে দিয়েছেন তার ওপর।(১) তোমাদের ইলাহ-ই তো একমাত্র ইলাহ। অতএব তোমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করো। আর (হে রাসূল!) তুমি অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও।
(35) যাদের কাছে আল্লাহর কথা উল্লেখ করা হলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা তাদের বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে, যারা সালাত কায়িম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি, তারা তা থেকে ব্যয় (দান) করে।
(36) আর (কুরবানির) উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় সেগুলোরওপর (যবহ করার সময়) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। (যবহ করার পর) যখন সেগুলো কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তোমরা তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে তা থেকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।
(37) (মনে রেখো,) আল্লাহর কাছে এগুলোর (কুরবানির পশুর ) গোশত ও রক্ত পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সেগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবীর পাঠ করতে পারো, এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন। সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।
(38) নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদেরকে (শত্রুদের অনিষ্টতা থেকে) রক্ষা করেন এবং তিনি কোনো আমানতের খিয়ানতকারী, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।
(39) যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো তাদেরকে, যারা আক্রান্ত হয়েছে। কারণ তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দানে সক্ষম।
(40) যাদেরকে তাদের নিজ বাড়ি-ঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বের করে দেয়া হয়েছে যে, তারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব।’ আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা দমন না করতেন, তবে বিধ্বস্ত হয়ে যেতো খ্রিষ্টান সন্ন্যাসীদের আশ্রম, গির্জা, ইয়াহূদীদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
(41) তারা এমন লোক যাদেরকে আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে তারা (পরিপূর্ণভাবে) সালাত কায়িম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকাজের আদেশ দিবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর সব কাজের (সাওয়াব ও শাস্তির) চূড়ান্ত পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।
(42) আর (হে রাসূল!) তারা (তোমার সম্প্রদায়) যদি তোমাকে মিথ্যারোপ করে, তবে (অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ ) তাদের পূর্বে ( এভেবেই রাসূলদেরকে ) মিথ্যারোপ করেছিল নূহ, ‘আদ ও ছামূদের জাতি।
(43) আর ইবরাহীমের জাতি ও লূতের জাতি (তাদেরকে মিথ্যারোপ করেছে)।
(44) আর মাদইয়ানবাসীরাও (শু‘আইবকে মিথ্যারোপ করেছিল)। অনুরূপভাবে মিথ্যারোপ করা হয়েছিল মূসাকে। তাই কাফিরদেরকে আমি (তাৎক্ষণিক শাস্তি না দিয়ে তাওবা করার) অবকাশ দিয়েছিলাম। তারপর আমি তাদেরকে (শাস্তির মাধ্যমে) পাকড়াও করেছিলাম। অতএব কেমন ছিল আমার শাস্তি!
(45) অতঃপর কত জনপদ আমি ধ্বংস করেছি, যেগুলোর বাসিন্দারা ছিল (কুফরীর কারণে) যালিম। তাই এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ (উলটে পড়ে) ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলো, কত কূপ (আগন্তুকশূন্য হয়ে) পরিত্যক্ত হয়েছে এবং কত সুদৃঢ় প্রাসাদ ধ্বংস হয়েছে!
(46) তারা কি জমিনে ভ্রমণ করে না? তাহলে (ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদগুলো দেখে) তাদের এমন হৃদয় হতো, যা দ্বারা তারা (বিবেক খাটিয়ে) উপলব্ধি করতে পারতো এবং এমন কান হতো, যা দ্বারা তারা শুনতে পারতো। বস্তুত চোখ তো অন্ধ হয় না; বরং অন্ধ হয় বুকের মধ্যকার হৃদয়(১)।
(47) আর (হে রাসূল!) তারা তোমাকে শাস্তি তরান্বিত করতে বলে; অথচ আল্লাহ কখনো তাঁর ওয়াদা খেলাফ করেন না।(১) আর তোমার রবের নিকট নিশ্চয় এক দিন তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।
(48) আর আমি কতো জনপদকে (দ্রুত শাস্তি না দিয়ে) অবকাশ দিয়েছি; অথচ তারা (কুফরীর কারণে) যালিম ছিল। অতঃপর আমি তাদেরকে (মূলোৎপাটনকারী শাস্তির মাধ্যমে) পাকড়াও করেছি। আর আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল ।
(49) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘হে মানুষ! আমি তো কেবল তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট ভীতি প্রদর্শনকারী।’
(50) সুতরাং যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য (তাদের রবের কাছে) রয়েছে ক্ষমা ও (জান্নাতে) সম্মানজনক রিযক।
(51) আর যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা করে(১), মূলতঃ তারা জাহান্নামের অধিবাসী।
(52) আর (হে রাসূল!) আমি তোমার পূর্বে যে রাসূল কিংবা নবী পাঠিয়েছি, তাদের কেউ যখনই (আল্লাহর কিতাবের কিছু) তিলাওয়াত করেছে, তখনই শয়তান তার তিলাওয়াতে (সন্দেহ সৃষ্টি করতে কিছু) নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে, আল্লাহ তা মুছে দেন।(১) অতঃপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সুদৃঢ় করে দেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়।
(53) এটা এজন্য যে, শয়তান (নবীর পড়ার মধ্যে) যা নিক্ষেপ করে, তা যাতে তিনি তাদের জন্য পরীক্ষার বস্তু বানিয়ে দেন, যাদের অন্তরসমূহে ব্যাধি রয়েছে এবং যাদের হৃদয়সমূহ পাষাণ। আর নিশ্চয় যালিমরা অনেক মতভেদে লিপ্ত রয়েছে।(১)
(54) এটা এজন্যও যে, যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তারা যেন জানতে পারে যে, এটা (মুহাম্মাদের ওপর নাযিলকৃত আলকুরআন) অবশ্যই তোমার রবের পক্ষ থেকে সত্য। অতঃপর তারা যেন এর প্রতি ঈমান আনে এবং তাদের অন্তর যেন এর প্রতি অনুগত হয়। আর যারা ঈমান এনেছে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে সরল পথ প্রদর্শনকারী।
(55) আর যারা কুফরী করেছে, তারা এতে সন্দেহ পোষণ করতেই থাকবে; যতক্ষণ না তাদের নিকট আকস্মিকভাবে কিয়ামত এসে পড়বে অথবা তাদের নিকট এসে পড়বে এক বন্ধ্যা দিনের(১) শাস্তি।
(56) সে দিনের বাদশাহী আল্লাহরই। তিনিই তাদের (মু’মিন ও কাফিরদের) মধ্যে বিচার করবেন। সুতরাং যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা স্থায়ী নি‘আমতপূর্ণ জান্নাতসমূহে অবস্থান করবে।
(57) আর যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে, তাদের জন্যেই রয়েছে (জাহান্নামে) অপমানজনক শাস্তি।
(58) আর যারা (আল্লাহর দ্বীনকে সম্মানিত করা ও তাঁর সন্তুষ্টির আশায়) আল্লাহর পথে হিজরত করে, অতঃপর (জিহাদে) নিহত হয় কিংবা (স্বাভাবিকভাবে) মারা যায়, আল্লাহ তাদেরকে (জান্নাতে) অবশ্যই উত্তম রিযক দান করবেন। আর নিশ্চয় আল্লাহই সর্বোত্তম রিযকদাতা।
(59) অবশ্যই তিনি তাদেরকে এমন (সন্তোষজনক) স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবেন, যা তারা পছন্দ করবে। আর আল্লাহ তো নিশ্চয় মহাজ্ঞানী, পরম ধৈর্যশীল।
(60) এটাই প্রকৃত অবস্থা।(১) আর যে ব্যক্তি নির্যাতিত হয়ে তার সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করে; অতঃপর তার ওপর আবার নির্যাতন করা হয়, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ (মু’মিনদের) পাপ মার্জনাকারী, অত্যন্ত ক্ষমাশীল।
(61) এটা(১) এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।
(62) আর এটা এজন্যও যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে (যে মূর্তিগুলোকে) ডাকে, অবশ্যই তা বাতিল। আর নিশ্চয় আল্লাহ তো সমুচ্চ, সুমহান।
(63) তুমি কি লক্ষ্য করো না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, যার ফলে (উদ্ভিদ জন্মানোর কারণে) জমিন সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে। নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষ্মদর্শী, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
(64) আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে, তা সব তাঁরই। আর নিশ্চয় আল্লাহই অভাবমুক্ত-অমুখাপেক্ষী , পরম প্রশংসিত।
(65) (হে রাসূল!) তুমি কি লক্ষ্য করো না যে, জমিনে যা কিছু আছে এবং নৌযানগুলো, যা তাঁরই নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণ করে, সবই আল্লাহ তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। আর তিনিই আকাশকে ধরে রেখেছেন, যাতে তাঁর অনুমতি ছাড়া তা জমিনের ওপর পড়ে না যায়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি বড়ই করুণাময়, পরম দয়ালু।
(66) আর তিনিই তোমাদের (অনস্তিত্ব থেকে) জীবন দিয়েছেন, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে (বয়স শেষে) মৃত্যু দিবেন, তারপর তিনিই তোমাদেরকে (মৃত্যুর পর হিসাব ও প্রতিদান দেওয়ার জন্যে) আবার জীবন দিবেন। নিশ্চয় মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ।
(67) আমি প্রত্যেক জাতির জন্য শরী‘আহ (ইবাদাতের নিয়ম-কানুন) নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা তারা অনুসরণ করে। সুতরাং ( হে রাসূল!) তারা যেনো তোমার সাথে এ ব্যাপারে (তোমার শরী‘আহর ব্যাপারে) কোনো বিতর্ক না করে। আর তুমি তোমার রবের দিকে ডাকো। নিশ্চয় তুমি সরল-সঠিক পথেই রয়েছ।
(68) আর (প্রমাণ প্রকাশিত হওয়ার পরও) তারা যদি তোমার সাথে বাকবিতণ্ডা করে, তাহলে তুমি বলো: ‘তোমরা যা করো, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।’(১)
(69) তোমরা (দুনিয়াতে ধর্মীয়) যে বিষয়ে মতভেদ করছো, আল্লাহ সে বিষয়ে কিয়ামতের দিন তোমাদের (মু’মিন ও কাফির বান্দাদের মাঝে) বিচার-মীমাংসা করে দিবেন।
(70) (হে রাসূল!) তুমি কি জানো না যে, আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, আল্লাহ তা সবকিছুই জানেন। নিশ্চয় তা একটি কিতাবে (লাওহে মাহফূযে সংরক্ষিত) রয়েছে। অবশ্যই এটা আল্লাহর জন্য অতি সহজ।
(71) আর তারা (মুশরিকরা) আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছু মূর্তির পূজা করে, যে সম্পর্কে আল্লাহ (তাঁর কিতাবসমূহে) কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি এবং যে ব্যাপারে তাদেরও কোনো জ্ঞান নেই। আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।
(72) আর যখন তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টরূপে তিলাওয়াত করা হয়, তখন যারা কুফরী করে তাদের মুখমণ্ডলে তুমি অসন্তোষ দেখতে পাবে; তাদের কাছে যারা আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তাদেরকে তারা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: তাহলে কি আমি তোমাদেরকে এর চেয়েও নিকৃষ্ট কিছুর সংবাদ দিবো? এটা আগুন, যারা কুফরী করে, আল্লাহ তাদেরকে তাতে প্রবেশ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর এটা কত নিকৃষ্ট ঠিকানা!
(73) হে মানুষ! একটি উপমা পেশ করা হলো, তোমরা মনোযোগ দিয়ে তা শোনো। নিশ্চয় তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে (যেসব মূর্তিগুলোকে) ডাকো , তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না; যদিও তারা এ উদ্দেশ্যে সকলে একত্রিত হয়। আর যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তারা তার কাছ থেকে তাও উদ্ধার করতে পারবে না। প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়,উভয়েই দুর্বল।(১)
(74) তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় না। নিশ্চয় আল্লাহ মহা ক্ষমতাবান, মহা পরাক্রমশালী।
(75) আল্লাহ ফিরিশতাদের ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন।(১) অবশ্যই আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।
(76) তাদের সামনে এবং পেছনে যা কিছু আছে, তিনি তা জানেন। আর সবকিছু আল্লাহর কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।(১)
(77) হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ‘ করো, সাজদা করো, তোমাদের রবের ইবাদাত করো এবং কল্যাণকর কাজ করো। আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে।’
(78) আর তোমরা আল্লাহর পথে (তাঁর সন্তুষ্টির জন্য নির্ভেজাল) জিহাদ করো যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং দীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা (এ সহজ ধর্মটি) তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দীন। আল্লাহ তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে এবং এ কিতাবেও (আলকুরআনেও)।(১) যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয়, আর তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষী হও। অতএব তোমরা (পরিপূর্ণভাবে) সালাত কায়িম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে ধরো।(২) তিনিই তোমাদের অভিভাবক। আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী!