20 - Taa-Haa ()

|

(1) ত্ব-হা।

(2) (হে রাসূল!) আমি তোমার প্রতি এ আলকুরআন এজন্য নাযিল করিনি যে, তুমি দুর্ভোগ পোহাবে।

(3) বরং যে (আল্লাহকে) ভয় করে তার জন্য (এ কুরআন) উপদেশ স্বরূপ।

(4) যিনি জমিন ও সুউচ্চ আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন, তাঁর নিকট থেকে (এ আলকুরআন) অবতীর্ণ হয়েছে।

(5) পরম করুণাময় ‘আরশের ওপর সমাসীন হয়েছেন।(১)

(6) যা আছে আসমানসমূহে, জমিনে ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী স্থানে এবং যা আছে মাটির নিচে তা সব তাঁরই।(১)

(7) আর (হে রাসূল!) তুমি যদি উচ্চস্বরে কথা বলো, তবে তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন।

(8) আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই; তাঁরই জন্যে রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ।

(9) আর (হে রাসূল!) তোমার কাছে কি মূসার (বৃত্তান্ত) সংবাদ পৌঁছেছে?

(10) যখন সে আগুন দেখলো, তখন সে নিজ পরিবারকে বললো: ‘তোমরা (এ জায়গায়) অপেক্ষা করো, আমি আগুন দেখতে পেয়েছি। আশা করি আমি তোমাদের জন্য তা থেকে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার নিয়ে আসতে পারবো অথবা আগুনের নিকট পথনির্দেশ পাবো।’(১)

(11) যখন সে আগুনের কাছে আসলো, তখন তাকে ডেকে বলা হলো: ‘হে মূসা।’

(12) নিশ্চয় আমিই তোমার রব। সুতরাং (সাক্ষাতের প্রস্তুতি স্বরূপ) তুমি তোমার জুতাজোড়া খুলে ফেলো। নিশ্চয় তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছ।’

(13) ‘আর আমি তোমাকে (রিসালাতের জন্যে) মনোনীত করেছি। সুতরাং তোমার কাছে যা ওয়াহীরূপে পাঠানো হচ্ছে ,তা মনোযোগ দিয়ে শোন।’

(14) ‘নিশ্চয় আমিই আল্লাহ। আমি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং তুমি এককভাবে আমারই ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণার্থে (পরিপূর্ণরূপে) সালাত কায়িম করো।’

(15) ‘নিশ্চয় কিয়ামত আসবেই; কিন্তু আমি তা ( এর আসার সময়টা ) গোপন রেখেছি, যাতে প্রত্যেককে ( প্রত্যেকটি মানুষকে ) স্বীয় চেষ্টা-সাধনা (কর্ম) অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া যায়।’

(16) অতএব যে ব্যক্তি কিয়ামতের প্রতি ঈমান রাখে না এবং স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে কিছুতেই তার ওপর ঈমান আনা থেকে ফিরিয়ে না রাখে; অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।

(17) আর (আল্লাহ মূসাকে সম্বোধন করে বলেনঃ ) ‘হে মূসা, তোমার ডান হাতে ওটা কী?’

(18) জবাবে সে (মূসা) বললো: ‘এটি আমার লাঠি; (চলার সময়) আমি এর ওপর ভর করি, এটি দিয়ে আমি আমার মেষপালের জন্য গাছের পাতা পাড়ি। এ ছাড়াও এটি আমার আরো অনেক কাজে লাগে।’

(19) আল্লাহ বললেন: ‘হে মূসা! তুমি ওটা নিক্ষেপ করো।’

(20) অতঃপর সে তা নিক্ষেপ করলো, অমনি তা সাপ হয়ে (ক্ষিপ্র বেগে) ছুটতে লাগলো।

(21) তিনি বললেন: ‘ওটাকে ধর এবং ভয় করো না। আমি ওকে ওর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিবো।’

(22) ‘আর তোমার হাত তোমার বগলের সাথে মিলাও। তাহলে তা শুভ্র উজ্জ্বল হয়ে কোনোরূপ ত্রুটি ছাড়া; আরেকটি নিদর্শনরূপে বেরিয়ে আসবে।’

(23) (হে মূসা! আমি তোমাকে এ দু’টি আলামত দেখালাম) এটা এজন্য যে, আমি তোমাকে আমার বড় বড় নিদর্শনসমূহের কিছু দেখাব।

(24) ‘তুমি ফিরা‘ঊনের কাছে যাও। নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে।’

(25) সে (মূসা) বললো: ‘হে আমার রব, আপনি আমার বুক প্রশস্ত করে দিন।’(১)

(26) এবং আমার কাজকে আমার জন্য সহজ করে দিন।

(27) আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন।(১)

(28) যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।

(29) আর আমার পরিবার থেকে আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন।

(30) আমার ভাই হারূনকে।

(31) তার দ্বারা আমার শক্তিকে সুদৃঢ় করুন।

(32) এবং তাকে আমার (রিসালাতের) কাজে শরীক করুন।

(33) যাতে আমরা বেশি করে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি।

(34) এবং অধিক পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি।

(35) আপনিই তো আমাদের বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।’

(36) আল্লাহ বললেন: ‘হে মূসা, তুমি যা চেয়েছো তা তোমাকে দেয়া হলো।’

(37) ‘আর (এটাই তো প্রথম নয় ) আমি আরো একবার তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম।

(38) যখন আমি তোমার মাতাকে ওয়াহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলাম, যা জানানোর ছিলো।(১)

(39) (আমি তাকে এ মর্মে আদেশ করেছি যে,) তুমি তাকে (মূসাকে) সিন্ধুকের মধ্যে রেখে দাও। তারপর তাকে সাগরে ভাসিয়ে দাও। যেন সাগর তাকে তীরে ঠেলে দেয়। ফলে তাকে আমার শত্রু ও তার শত্রু (ফিরা‘ঊন) উঠিয়ে নিবে। আর (হে মূসা) আমি আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম(১), যাতে তুমি আমার চোখের সামনে(২) প্রতিপালিত হও।’

(40) যখন তোমার বোন (সিন্দুকটি যেদিকে ভেসে যায়, সেদিকেই সাথে সাথে) চলছিল। অতঃপর সে গিয়ে (যারা তোমাকে উঠিয়ে নিয়েছে তাদেরকে) বললো: ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একজনের সন্ধান দিব, যে এর দায়িত্বভার নিতে পারবে?’ অতঃপর আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে দুশ্চিন্তায় না থাকে। আর তুমি (ক্বিবতী সম্প্রদায়ের) এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে। তখন আমি তোমাকে দুশ্চিন্তা থেকে নাজাত দিলাম এবং তোমাকে আমি বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছি। অতঃপর তুমি কয়েক বছর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে অবস্থান করেছ। তারপর হে মূসা! (তোমার সাথে কথা বলার) নির্ধারিত সময়ে তুমি এসে উপস্থিত হয়েছো।

(41) এবং আমি তোমাকে আমার নিজের (রিসালাত প্রদানের) জন্য প্রস্তুত করেছি।

(42) (হে মূসা!) তুমি ও তোমার ভাই (হারূন) আমার (ক্ষমতা ও একত্ববাদের) আয়াতসমূহ নিয়ে (ফিরা‘ঊনের কাছে) যাও এবং আমাকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কোনোরূপ শৈথিল্য কর না।(১)

(43) তোমরা দু’জন ফিরা‘ঊনের নিকট যাও; কেননা সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে।

(44) তোমরা তার সাথে কোমল ভাষায় কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা (আল্লাহকে) ভয় করবে।

(45) তারা দুজন বললো: ‘হে আমাদের রব! আমরা তো আশঙ্কা করছি যে, (তাকে পরিপূর্ণরূপে দা‘ওয়াত দেয়ার আগেই) সে আমাদের উপর (দ্রুত শাস্তি দিয়ে) বাড়াবাড়ি করবে অথবা (হত্যা, ইত্যাদির মাধ্যমে) সীমালঙ্ঘন করবে।’

(46) আল্লাহ (তাদেরকে) বললেন: ‘তোমরা দুজন ভয় করো না। (সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে) আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনছি ও দেখছি।’

(47) সুতরাং তোমরা দু’জন তার (ফিরা‘ঊনের) কাছে যাও, অতঃপর বলো: ‘আমরা তোমার রবের দু’জন রাসূল। সুতরাং তুমি বানূ ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যেতে দাও এবং (ছেলেদেরকে হত্যা করে এবং মেয়েদেরকে বাঁচিয়ে রেখে) তাদেরকে নির্যাতন করো না। আমরা তোমার কাছে এসেছি তোমার রবের পক্ষ থেকে (আমাদের সত্যতার) প্রমাণ নিয়ে। আর তাদের প্রতি শান্তি, যারা হিদায়েতের পথ অনুসরণ করে ।’

(48) নিশ্চয় আমাদের নিকট (আল্লাহর পক্ষ থেকে) ওয়াহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, (দুনিয়া ও আখিরাতের) শাস্তি তো তার জন্য, যে (আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি) মিথ্যারোপ করে এবং (রাসূলগণ যা নিয়ে এসেছে, তা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়।

(49) ফিরা‘ঊন বললো: ‘হে মূসা, তাহলে কে তোমাদের রব?’

(50) মূসা জবাবে বললো: ‘আমাদের রব তিনিই, যিনি সকল বস্তুকে তার (উপযুক্ত) আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সবাইকে সঠিক পথ নির্দেশ করেছেন।’

(51) ফিরা‘ঊন বললো: ‘তাহলে পূর্বের জাতিগুলোর অবস্থা কী? (যারা কুফরীর ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো)।’

(52) মূসা বললো: ‘এর জ্ঞান আমার রবের নিকট (লাওহে মাহফূযে) একটি কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। আমার রব (সেগুলো জানতে) কোন ভুল করেন না এবং ভুলেও যান না।’

(53) ‘যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা বানিয়েছেন এবং তাতে তোমাদের জন্য চলার (উপযুক্ত) পথ করে দিয়েছেন। উপরন্তু আসমান থেকে তিনি পানি বর্ষণ করেছেন , অতঃপর তা দিয়ে আমরা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ জোড়ায় জোড়ায় উৎপন্ন করেছি।

(54) ( তা থেকে) তোমরা নিজেরা খাও এবং তোমাদের গবাদি পশুদেরকে (তাতে) চরাও। অবশ্যই এতে বিবেকসম্পন্ন লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।

(55) মাটি থেকেই আমি (আল্লাহ) তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, মাটিতেই আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিবো এবং মাটি থেকেই পুনরায় তোমাদেরকে (কিয়ামতের দিন পুনরুত্থানের জন্য) বের করে আনবো।

(56) নিশ্চয়ই আমি ফিরা‘ঊনকে আমার সকল নিদর্শন দেখিয়েছিলাম; কিন্তু সে তা মিথ্যারোপ করেছে এবং (আমার প্রতি ঈমান আনতে) অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

(57) সে বললো: ‘হে মূসা! তুমি কি আমাদের কাছে এজন্য এসেছো যে, তোমার যাদুর দ্বারা তুমি আমাদেরকে আমাদের দেশ (মিশর) থেকে বের করে দিবে?’

(58) ‘তাহলে আমরা অবশ্যই তোমার নিকট অনুরূপ যাদু নিয়ে আসবো। সুতরাং (যাদুবিদ্যার প্রতিযোগিতার জন্য) একটি মধ্যবর্তী স্থানে আমাদের ও তোমার মিলিত হওয়ার জন্য একটি সময় নির্ধারণ করো, যা আমরাও লঙ্ঘন করবো না, তুমিও করবে না।’

(59) মূসা বললো: ‘তোমাদের নির্ধারিত সময় হলো উৎসবের দিন। আর সেদিন দুপুরের আগেই যেন লোকজনকে সমবেত করা হয়।’

(60) অতঃপর ফিরা‘ঊন উঠে গেলো। তারপর সে তার কৌশল একত্র করলো, তারপর সে (নির্দিষ্ট স্থানে ও সময়ে প্রতিযোগিতার জন্য) আসলো।

(61) মূসা তাদেরকে বললো: ‘তোমাদের দুর্ভাগ্য! তোমরা (যাদুর মাধ্যমে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে) আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করো না। তা করলে তিনি এক (কঠিন ) শাস্তি দ্বারা তোমাদের মূলোৎপাটন করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি মিথ্যারোপ করে, সে-ই ব্যর্থ হয়।’

(62) তখন তারা (যাদুকররা) নিজেদের মধ্যে তাদের কর্ম সম্বন্ধে বাক-বিতণ্ডা করলো এবং তারা গোপনে পরামর্শ করলো।

(63) তারা (যাদুকর পরস্পর) বললো: ‘এ দু’জন অবশ্যই যাদুকর। তারা চায় তাদের যাদুর মাধ্যমে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ (মিশর) থেকে বের করে দিতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন পদ্ধতি ধ্বংস করে দিতে।’

(64) কাজেই তোমরা তোমাদের সকল কলাকৌশল একত্রিত করো। তারপর তোমরা সবাই সারিবদ্ধভাবে আসো।(১) আর আজ যে (প্রতিদ্বন্দ্বীর ওপর) বিজয়ী হবে, সে-ই সফল হবে।’

(65) তারা বললো: হে মূসা, হয় তুমি (যাদু) নিক্ষেপ করো, না হয় আমরাই প্রথমে (যাদু) নিক্ষেপকারী হই।

(66) মূসা বললো: ‘বরং তোমরাই (প্রথমে যাদু) নিক্ষেপ করো।’ অতঃপর তাদের যাদুর প্রভাবে মূসার কাছে মনে হলো যেন, তাদের নিক্ষেপিত রশি ও লাঠিগুলো ছুটোছুটি করছে।

(67) তখন মূসা তার অন্তরে কিছুটা ভীতি অনুভব করলো।

(68) আমি (আল্লাহ) বললাম: ‘তুমি ভয় পেয়ো না, নিশ্চয় তুমিই বিজয়ী হবে।’

(69) ‘আর তুমি নিজের ডান হাতে যা (যে লাঠি) আছে, তা নিক্ষেপ করো। ফলে তারা যা করেছে, এটা (সাপে রূপান্তরিত হয়ে) সেগুলো খেয়ে ফেলবে। তারা যা করেছে, তাতো কেবল যাদুকরের কৌশল। আর যাদুকর যেখানেই আসুক না কেনো, সে সফল হবে না।’

(70) অতঃপর যাদুকরেরা সাজদায় লুটিয়ে পড়ল। তারা বললো: ‘আমরা হারূন ও মূসার রবের প্রতি ঈমান আনলাম।’(১)

(71) ফিরা‘ঊন (যাদুকরদের হুমকি দিয়ে) বললো: ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয় সে-ই (মূসাই) তোমাদের প্রধান, যে তোমাদেরকে যাদু শিখিয়েছে। সুতরাং আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলবো এবং আমি তোমাদেরকে খেজুর গাছের কাণ্ডে (মৃত্যু পর্যন্ত) শূলবিদ্ধ করবোই। আর তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে, আমাদের মধ্যে কার শাস্তি বেশি কঠোর এবং বেশি স্থায়ী (আমি, না কি মূসার রবের?! )।’

(72) যাদুকররা (ফিরা‘ঊনকে) বললো: ‘আমাদের নিকট যে সকল স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তার ওপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দিবো না। সুতরাং তুমি যা ফয়সালা করতে চাও, তাই করো। তুমি তো শুধু এ দুনিয়ার জীবনের ওপর কর্তৃত্ব করতে পার।’

(73) ‘নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ এবং যে যাদু তুমি আমাদেরকে করতে বাধ্য করেছো, তা ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।’(১)

(74) নিশ্চয়ই (কিয়ামতের দিবসে) যে তার রবের নিকট অপরাধী অবস্থায় আসবে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবেও না, বাঁচবেও না।

(75) আর যারা তাঁর নিকট আসবে মু’মিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে, তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা।

(76) (সে সুউচ্চ মর্যাদা হলো) চিরস্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। আর এটা হলো সেসব লোকদের প্রতিদান যারা (কুফরী ও গুনাহ থেকে) পবিত্র রয়েছে।

(77) আর আমি অবশ্যই মূসার কাছে এ মর্মে ওয়াহী পাঠিয়েছি যে, ‘আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতের বেলায় (মিশর থেকে) রওয়ানা হও। অতঃপর সজোরে আঘাত করে তাদের জন্য শুকনো রাস্তা বানাও। (ফিরা‘ঊন ও তার সাথীদের কর্তৃক) পেছন থেকে ধরে ফেলার আশঙ্কা করো না এবং (সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার) ভয়ও করো না।’

(78) তারপর ফিরা‘ঊন তার সেনাবাহিনীসহ তাদের পিছু নিলো। অতঃপর সমুদ্র তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করলো।

(79) আর ফির‘আউন (কুফরীকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে) তার জাতিকে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সে তাদেরকে হিদায়াতের পথ দেখায়নি।

(80) হে বানূ ইসরাঈল! আমিই তোমাদেরকে তোমাদের শত্রুর হাত থেকে নাজাত দিয়েছি। আর তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম তূর পাহাড়ের ডান পাশের(১) এবং আমি তোমাদের জন্য অবতরণ করেছিলাম ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’।(২)

(81) আমি তোমাদেরকে যে রিযক দান করেছি, তা থেকে পবিত্র বস্তুসমূহ খাও এবং এতে সীমালঙ্ঘন করো না। করলে তোমাদের ওপর আমার গজব পতিত হবে। আর যার ওপর আমার গজব পতিত হয়, সে (দুনিয়া ও আখিরাতে) অবশ্যই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

(82) আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, তারপর সৎপথে অবিচল থাকে।

(83) হে মূসা! তোমার সম্প্রদায়কে পিছনে ফেলে তোমাকে তাড়াহুড়া করতে বাধ্য করল কিসে?

(84) মূসা বললো: ‘এই তো তারা আমার পিছনেই আছে। হে আমার রব! আমি তাড়াহুড়া করে আপনার নিকট এসেছি, যাতে আপনি আমার ওপর সন্তুষ্ট হন।’

(85) আল্লাহ বললেন: ‘তোমার চলে আসার পর আমি তো তোমার সম্প্রদায়কে (গো-বাছুর পূজার) পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছি। আর সামেরী তাদেরকে (পূজার জন্য আহ্বান করে) পথভ্রষ্ট করেছে।’

(86) অতঃপর (তাদের গো-বাছুর পূজার কারণে) মূসা রাগান্বিত ও মর্মাহত হয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেলো। সে বললো: ‘হে আমার জাতি! তোমাদের রব কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি?(১) তোমাদের কাছে কি সেই প্রতিশ্রুতির সময় দীর্ঘ হয়ে গেছে? নাকি তোমরা চেয়েছো যে, তোমাদের ওপর তোমাদের রবের গজব পতিত হোক? তাই তোমরা আমার সাথে (আনুগত্যের ওপর অটল থাকার) কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে?’

(87) তারা জবাবে বললো: ‘আমরা তো স্বেচ্ছায় আপনার সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করিনি; বরং জাতির অলংকারের বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাই আমরা তা আগুনে নিক্ষেপ করেছি, অনুরূপভাবে সামেরীও নিক্ষেপ করেছে।’(১)

(88) তারপর সামেরী (সে অলংকার থেকে) তাদের জন্য (রূহবিহীন) একটা গো বাছুরের অবয়ব বের করে আনলো, যার ছিল আওয়াজ। তখন তারা বললো: ‘এটাই তোমাদের ইলাহ এবং মূসারও ইলাহ; কিন্তু সে (মূসা) এ কথা ভুলে গেছে।’(১)

(89) তারা কি দেখে না যে, এটা (গো-বাছুরটি) তাদের কোনো কথার জবাব দিতে পারে না, আর তাদের কোনো ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতাও রাখে না?

(90) আর মূসা তাদের নিকট ফিরে আসার আগেই হারূন তাদেরকে বলেছিল: ‘হে আমার সম্প্রদায়! এটা দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। আর তোমাদের রব তো পরম করুণাময়। তাই তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার আদেশ মেনে চল।’

(91) তারা বলল: ‘আমরা এর পূজা করেই যাবো; যতক্ষণ না মূসা আমাদের কাছে ফিরে আসে।’

(92) মূসা (ফিরে এসে তাঁর ভাই হারূনকে) বললো: ‘হে হারূন! তুমি যখন দেখলে যে, তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, তখন তোমাকে কে নিষেধ করেছে;

(93) তাদেরকে ছেড়ে আমার কাছে আসতে?(১) তাহলে তুমিও কি আমার আদেশ অমান্য করলে?’

(94) সে (হারূন) বললো: ‘হে আমার সহোদর! আমার দাড়িও ধরো না, মাথার চুলও ধরো না। আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে, তুমি বলবে, তুমি বানূ ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছো এবং আমার কথা রক্ষা করোনি।’(১)

(95) মূসা সামেরীকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘হে সামেরী! তোমার কী অবস্থা?

(96) সে (সামিরীকে ) বললো: ‘আমি এমন কিছু দেখেছি, যা ওরা দেখেনি। তারপর আমি দূতের (জিবরীলের)(১) পায়ের চিহ্ন থেকে এক মুষ্টি মাটি নিয়েছিলাম। অতঃপর তা (গলানো স্বর্ণের ওপর) নিক্ষেপ করেছিলাম। আর আমার মন আমার জন্য এরূপ করাটা শোভন করেছিল।’

(97) মূসা (সামিরীকে) বললো: ‘তুমি এখান থেকে চলে যাও। তোমার শাস্তি হলো, জীবদ্দশায় তুমি বলতে থাকবে, ‘আমাকে স্পর্শ করো না।’ আর তোমার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় (কিয়ামতের দিন) রইলো যার কখনো ব্যতিক্রম হবে না। আর তুমি তোমার (গো-বাছুর) ইলাহের প্রতি চেয়ে দেখো, যার পূজায় তুমি রত ছিলে, আমরা তা অবশ্যই জ্বালিয়ে দিবো। তারপর বিক্ষিপ্ত করে তা সাগরে নিক্ষেপ করবোই।’

(98) ‘তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। সকল বিষয়েই তার জ্ঞান পরিব্যাপ্ত।’

(99) (হে রাসূল! তোমার) পূর্বে যা ঘটে গেছে তার কিছু সংবাদ এভাবেই আমি তোমার কাছে বর্ণনা করি। আর আমি তোমাকে আমার পক্ষ থেকে যিকর (আলকুরআন) দান করেছি।

(100) যে (তোমার ওপর নাযিলকৃত) আলকুরআন থেকে বিমুখ হবে, অবশ্যই সে কিয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে।

(101) সেখানে (শাস্তির মধ্যে) তারা স্থায়ী হবে এবং কিয়ামতের দিন এটা তাদের জন্য বোঝা হিসেবে কতোই না মন্দ হবে!

(102) যেদিন শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, আর সেদিন আমি অপরাধীদেরকে দৃষ্টিহীন (নীল চোখবিশিষ্ট) অবস্থায় সমবেত করব।

(103) সেদিন তারা চুপে চুপে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করবে: ‘তোমরা (মৃত্যুর পর বারযাখে) মাত্র দশদিন অবস্থান করেছিলে।’

(104) আমি ভালোভাবেই জানি তারা কী বলবে। ( আমি এ কথাও জানি ) তাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত সৎপথে ছিল যে লোকটি, সে বলবে: ‘তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলে’।

(105) আর (হে রাসূল!) তারা তোমাকে (কিয়ামতের দিনের) পাহাড় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলো: ‘আমার রব এগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে (সেগুলোকে ধূলিকণার ন্যায়) ছিটিয়ে দিবেন।‘

(106) তারপর তিনি তাকে উদ্ভিদশূন্য মসৃণ সমতলভূমি করে দিবেন।

(107) তাতে তুমি কোনো বক্রতা ও উঁচু-নিচু দেখবে না।

(108) সেদিন তারা (মানুষ) আহ্বানকারী (ফিরিশতার) অনুসরণ করবে। এর কোনো এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ (ভয়ে) নিচু হয়ে যাবে। তাই তুমি মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না।

(109) সেদিন পরম করুণাময় যাকে অনুমতি দিবেন এবং যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন, তার সুপারিশ ছাড়া কারো সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না।

(110) তিনি তাদের আগের ও পরের সবকিছুই জানেন; কিন্তু তারা জ্ঞানের দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারবে না।

(111) আর চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে সকলেই অবনত হবে। আর সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে, যে যুলমের (পাপের) বোঝা করবে।

(112) এবং যে মু’মিন অবস্থায় ভালো কাজ করবে, তার কোনো অবিচারের বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না।

(113) আর এভাবেই(১) আমি আরবী ভাষায় আলকুরআন নাযিল করেছি এবং তাতে বিভিন্ন সতর্কবাণী বর্ণনা করেছি, যাতে তারা মুত্তাকী হতে পারে অথবা এটি যেন হয়, তাদের জন্য উপদেশ।

(114) সুতরাং আল্লাহ অতি মহান, সর্বোচ্চ সত্তা, যিনি সত্যিকার অধিপতি। আর তোমার প্রতি (জিবরীল কর্তৃক) ওয়াহী নাযিল সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তুমি আলকুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করো না এবং তুমি বলো: ‘হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’

(115) আর আমি ইতঃপূর্বে আদমের প্রতি (একটি নির্দিষ্ট গাছের ফল না খাওয়ার) নির্দেশ দিয়েছিলাম; কিন্তু সে তা ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে সংকল্পে দৃঢ় পাইনি।

(116) আর (হে রাসূল!) স্মরণ করো: যখন আমি ফিরিশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে (সম্মান প্রদর্শনমূলক) সাজদা করো,’ তখন ইবলীস ছাড়া সকলেই সাজদা করলো; সে (অহংকারবশত আমার আদেশ) অমান্য করলো।

(117) অতঃপর আমি (আদমকে ডেকে) বললাম: ‘হে আদম, নিশ্চয় এ ইবলীস তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। সুতরাং সে যেন (কুমন্ত্রণা দিয়ে) তোমাদের উভয়কে জান্নাত থেকে কিছুতেই বের করে না দেয়, তাহলে তোমরা দুর্ভোগ পোহাবে।’

(118) ‘নিশ্চয় তোমার জন্য (জান্নাতে) এ ব্যবস্থা রয়েছে যে, ‘তুমি সেখানে ক্ষুধার্তও হবে না এবং নগ্নও হবে না।’

(119) ‘আর সেখানে তুমি পিপাসার্তও হবে না এবং সূর্যের তাপেও আক্রান্ত হবে না।’

(120) অতঃপর শয়তান তাকে (আদমকে) কুমন্ত্রণা দিল এবং তাকে বললো: ‘হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব, অমর গাছ(১) এবং অক্ষয় রাজত্ব সম্পর্কে?’

(121) অতঃপর তারা উভয়েই (আদম ও হাওয়া) সে গাছ থেকে ফল খেলো। ফলে তাদের উভয়ের লজ্জাস্থান তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং তারা জান্নাতের গাছের পাতা ছিঁড়ে তা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগলো। এভাবে আদম তার রবের হুকুম অমান্য করলো; ফলে সে বিভ্রান্ত হলো।

(122) এরপর তার রব তাকে (ক্ষমা ও অনুগ্রহ দানের জন্য অথবা নবী হিসেবে) মনোনীত করলেন। তিনি তার তাওবা কবুল করলেন এবং তাকে পথনির্দেশ করলেন।

(123) আল্লাহ (আদম ও হাওয়াকে) বললেন: ‘তোমরা উভয়েই জান্নাত হতে এক সাথে (জমিনে) নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। অতঃপর যখন তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত আসবে, তখন যে আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং (আখিরাতে শাস্তির সম্মুখীন হয়ে) দুর্ভাগাও হবে না।

(124) আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, নিশ্চয় তার জন্য (দুনিয়া ও বরযখে) হবে এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়।’

(125) সে বলবে: ‘হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো (দুনিয়াতে) দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ছিলাম?’

(126) প্রত্যুত্তরে আল্লাহ বলবেন: ‘এমনিভাবেই (দুনিয়াতে) তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলি এসেছিল; কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে(১) এবং সেভাবে আজ তোমাকেও (জাহান্নামে) বিস্মৃত করে রাখা হবে।’

(127) আর এভাবেই আমি (দুনিয়াতেই ) প্রতিফল দান করি তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে এবং তার রবের নিদর্শনাবলিতে ঈমান আনে না। আর আখিরাতের শাস্তি তো অবশ্যই কঠোরতর ও অধিকতর স্থায়ী।

(128) আচ্ছ, এটি কি তাদেরকে সৎপথ দেখালো না যে, আমি তাদের পূর্বে কতো মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদের বাসভূমিতে তারা বিচরণ করে থাকে? নিশ্চয় এর মধ্যে রয়েছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য নিদর্শন।

(129) আর যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে (প্রমাণ দাঁড় করানো ছাড়া কাউকে শাস্তি না দেওয়ার) পূর্ব সিদ্ধান্ত ও একটি কাল নির্ধারিত হয়ে না থাকতো, তবে আশু শাস্তি অবশ্যম্ভাবী হতো।

(130) সুতরাং (হে রাসূল!) এরা যা বলে তার ওপর ধৈর্যধারণ কর এবং তাসবীহ পাঠ কর তোমার রবের প্রশংসা বর্ণনার মাধ্যমে, (ফজরের সালাতে) সূর্যোদয়ের পূর্বে, (আসরের সালাতে) সূর্যাস্তের পূর্বে এবং তাসবীহ পাঠ করো (মাগরিব ও ‘ইশার সালাতে) রাতের কিছু অংশে এবং (যোহরের ও মাগরিবের সালাতে) দিনের প্রান্তসমূহে, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পারো।

(131) আর (হে রাসূল!) তুমি কখনো প্রসারিত করো না তোমার দু’চোখ সে সবের প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি। যাতে আমি সে বিষয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করে নিতে পারি। আর তোমার রবের প্রদত্ত রিযক সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিকতর স্থায়ী।

(132) আর (হে রাসূল! তুমি) তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার ওপর অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে (তোমার নিজের জন্য অথবা অন্য কারো জন্য) কোনো রিযক চাই না। আমিই তোমাকে রিযক দেই। আর (দুনিয়া ও আখিরাতের) উত্তম পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।

(133) আর তারা বলে: ‘সে (মুহাম্মাদ) তার রবের কাছ থেকে আমাদের নিকট (তাঁর সত্যতা ও রাসূল হওয়া প্রমাণস্বরূপ) কোনো নিদর্শন নিয়ে আসে না কেনো?’ পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে যে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে, তা কি তাদের কাছে আসেনি?

(134) আর যদি আমি তাদেরকে ইতঃপূর্বে (রাসূল ও কিতাব পাঠানোর আগেই) কোনো শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলতো: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের কাছে কোনো রাসূল পাঠালেন না কেনো? তাহলে তো আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার পূর্বে, আপনার নিদর্শনাবলি অনুসরণ করতাম।’

(135) (হে রাসূল! তুমি এ মিথ্যারোপকারীদেরকে) বলো: ‘প্রত্যেকেই (আল্লাহর ফায়সালার জন্য) প্রতীক্ষা করছে। অতএব তোমরাও প্রতীক্ষায় থাকো। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে কারা সঠিক পথের ওপর রয়েছে এবং কারা হিদায়াতপ্রাপ্ত।’