(1) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা (তোমাদের) অঙ্গীকারসমূহ পূরণ করো। (জেনে রাখো,) তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু (উট, গরু, ছাগল প্রভৃতি) হালাল করা হয়েছে, সেগুলো ছাড়া যেগুলো তোমাদের নিকট (সামনে) পড়ে শুনানো হবে। তবে ইহরাম অবস্থায় (স্থলভাগের পশু) শিকার করাকে বৈধ মনে করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ (হালাল ও হারাম করার) যা ইচ্ছে আদেশ করেন।
(2) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে, হারাম মাসকে, কুরবানির জন্য কা‘বায় পাঠানো পশু (হাদী)কে, (কুরবানির উদ্দেশ্যে) গলায় (সুতো ইত্যাদির মালা) পরানো চিহ্নবিশিষ্ট পশু এবং নিজ রবের অনুগ্রহ ও সন্তোষ লাভের আশায় পবিত্র ঘর অভিমুখী যাত্রীদেরকে অবমাননা করাকে হালাল মনে করো না। যখন তোমরা (ইহরাম থেকে) হালাল হও, তখন (চাইলে) শিকার করো। তোমাদেরকে আলমসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা প্রদানের কারণে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে কখনই সীমালঙ্ঘন করতে প্ররোচিত না করে। তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ায় পরস্পরের সহযোগিতা করো। আর পাপকর্ম ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না। আর (আল্লাহর আনুগত্যে অনড় থেকে ও তাঁর অবাধ্যতা থেকে দূরে থেকে) আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর অবাধ্যদেরকে) শাস্তিদানে কঠোর।
(3) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, (প্রবাহিত) রক্ত, শূকরের গোশত, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবহ করা পশু, শ্বাসরুদ্ধ করে মারা পশু, আঘাত করে মারা পশু, উঁচু থেকে পড়ে মারা যাওয়া পশু, অন্য প্রাণীর শিঙের আঘাতে মরা পশু, হিংস্র পশুতে খাওয়া পশু; তবে যা তোমরা যবহ করতে পেরেছ তা ছাড়া, (অর্থাৎ যবহ করলে, তা হালাল হয়ে যাবে।) আর যা (যে পশু) মূর্তি পূজার বেদিতে বলি দেয়া হয়েছে এবং জুয়ার তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করা হয়েছে, এগুলো সবই পাপকাজ। আজ কাফিররা (ইসলামের শক্তি দেখে) তোমাদের দীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না; বরং আমাকে ভয় করো। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নি‘আমত (আল-কুরআন) সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন (জীবন ব্যবস্থা) হিসেবে ইসলামকে পছন্দ করলাম। অতঃপর কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে, ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে (হারামকৃত জিনিসগুলো থেকে কিছু খেলে, তার গুনাহ হবে না)। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
(4) (হে রাসূল) তারা তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী হালাল করা হয়েছে? তুমি তাদের বল: ‘তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে, সকল পবিত্র খাদ্য এবং শিকারি পশু-পাখি (যেমনঃ কুকুর,বাঘ,শকূন ইত্যাদি ), যাদেরকে তোমরা শিকার প্রশিক্ষণ দিয়েছ; সেগুলোকে তোমরা শেখাও, যা আল্লাহ তোমাদেরকে শিখিয়েছেন। সুতরাং এই (শিকারি পশুপাখি)-গুলো যা কিছু তোমাদের জন্য শিকার করে আনে, তা থেকে খাও এবং তাতে তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর আল্লাহর (আদেশ-নিষেধ মেনে) তাকওয়া অবলম্বন করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ দ্রুত হিসেব গ্রহণকারী।
(5) আজ তোমাদের জন্য সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস হালাল করা হলো ও আহলে কিতাবের (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের যবাইকৃত) খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের (যবহকৃত পশু) খাদ্যদ্রব্যও তাদের জন্য হালাল। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের পূর্বেকার আহলে কিতাবের (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের) সচ্চরিত্রা নারীদেরকে তোমাদের জন্য (বিয়ে করা) বৈধ করা হলো; (তবে শর্ত হলো) তোমরা বিয়ের উদ্দেশ্যে তাদের মোহর প্রদান করবে; প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন সঙ্গিনী (প্রেমিকা) গ্রহণকারী হিসেবে নয়। আর যে কেউ আল্লাহ প্রণীত শারী‘আতকে (ঈমানকে) অস্বীকার করলে, তার আমল অবশ্যই বরবাদ হয়ে যাবে(১) এবং সে আখিরাতে (জাহান্নামে প্রবেশ করে) ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(6) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও তখন (ছোট নাপাকি হলে) তোমরা (সালাতের পূর্বে ) তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধৌত করো, তোমাদের মাথায় মাসহ করো এবং পায়ের টাখনু (গোড়ালি) পর্যন্ত ধৌত করো। আর যদি তোমরা জুনুবী (বড় নাপাকি) অবস্থায় থাকো, তবে গোসল করে পবিত্র হও। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খানা থেকে আসে (ছোট নাপাকি হয়) বা তোমরা স্ত্রীর সাথে সংগম করে (বড় নাপাকি হয়), অতঃপর (পবিত্রতার জন্যে) পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে। সুতরাং তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাত মাসহ করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্টে ফেলতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নি‘আমত পরিপূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।
(7) আর স্মরণ করো, তোমাদের ওপর আল্লাহর নি‘আমতের কথা (ইসলামের প্রতি হিদায়াত) এবং সে অঙ্গীকারের কথা, যার সাথে তিনি তোমাদেরকে শক্তভাবে আবদ্ধ করেছিলেন; যখন তোমরা (নবী মুহাম্মাদকে বায়‘আতের সময়) বলেছিলে: ‘আমরা আপনার কথা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।’ আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের বিষয় সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।
(8) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদাতা হিসেবে সদা অবিচল থাকবে। কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে বেইনসাফির (অবিচারের) প্রতি প্ররোচিত না করে। তোমরা ইনসাফ করো, এটা তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী। আর তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে) ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।
(9) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তাদের জন্য রয়েছে (গুনাহের) ক্ষমা ও মহাপুরস্কার (জান্নাত)।
(10) আর যারা কুফরী করে এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী।
(11) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই (নিরাপত্তার) নি‘আমতের কথা স্মরণ করো যখন এক সম্প্রদায় (হত্যা উদ্দেশ্যে) তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের হাত প্রসারিত করতে চেয়েছিল, তখন তিনিই তাদের হাত তোমাদের থেকে নিবৃত্ত রাখলেন। আর তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করো। আল্লাহর ওপরই যেন মু’মিনগণ তাওয়াক্কুল (নির্ভর) করে।
(12) আর আল্লাহ অবশ্যই বানূ ইসরাঈলের (আনুগত্যের) অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বারোজন দলনেতা (দায়িত্বশীল) পাঠিয়েছিলাম। আর আল্লাহ (তাদেরকে) বলেছিলেন: ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের (সাহায্য-সহযোগিতায়) সাথে আছি, যদি তোমরা সালাত কায়িম করো, যাকাত দাও, আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আনো, তাদেরকে সম্মান-সহযোগিতা করো এবং আল্লাহকে কর্জে হাসানা (উত্তম ঋণ) দাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবো, আর অবশ্যই তোমাদেরকে প্রবেশ করাবো জান্নাতসমূহে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। তোমাদের মধ্যে এরপরেও যে কুফরী করবে, সে অবশ্যই সরল-সোজা পথ হারাবে।’
(13) অতঃপর তাদের কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদেরকে লা’নত করেছি ও তাদের হৃদয়কে কঠিন করে দিয়েছি। তারা (আল্লাহর কালামের) শব্দগুলোকে আসল অর্থ থেকে বিকৃত করতো এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তার একাংশ তারা ভুলে গিয়েছিল। আর (হে নবী!) তুমি সবসময় তাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবে। কাজেই তাদেরকে ক্ষমা করো এবং উপেক্ষা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।
(14) আর যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’ (খ্রীস্টান), আমি তাদের থেকেও (ইয়াহূদীদের মতো) অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তার কিছু অংশ ভুলে গেছে। ফলে আমি তাদের মধ্যে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত শত্রুতা ও ঘৃণা বৃদ্ধি করে দিয়েছি(১) এবং অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অবহিত করবেন।
(15) হে আহলে কিতাব! এখন তো তোমাদের কাছে আমার রাসূল (মুহাম্মাদ) এসেছে। তোমরা (তোমাদের ওপর নাযিলকৃত) কিতাবের যা গোপন করতে, তার অনেক কিছু তোমাদের নিকট সে প্রকাশ করছে এবং অনেক কিছু ছেড়ে দিচ্ছে। অবশ্যই আল্লাহর নিকট থেকে এক জ্যোতি (অহীর ধারক রাসূল মুহাম্মদ) ও সুস্পষ্ট কিতাব (আলকুরআন) তোমাদের কাছে এসেছে।
(16) যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে, এর (এ কিতাবের) মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির (জান্নাতের) পথ দেখান এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে (কুফররী ও গুনাহর) অন্ধকার থেকে (ঈমান ও আনুগত্যের) আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে (ইসলামের) সরল-সঠিক পথের দিকে হিদায়াত দেন।
(17) অবশ্যই তারা (খ্রিস্টানরা) কুফরী করেছে, যারা বলে ‘নিশ্চয় মারইয়াম পুত্র (‘ঈসা) মাসীহই আল্লাহ’। (হে রাসূল) বলো: যদি আল্লাহ ধ্বংস করতে চান মারইয়াম পুত্র (‘ঈসা) মাসীহকে ও তার মাকে এবং জমিনে যারা আছে তাদের সকলকে; তাহলে তাঁকে বাঁধা দেবার শক্তি কার আছে?’ আর আসমানসমূহ, জমিন ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী যা রয়েছে, তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা, তা সৃষ্টি করেন। আর আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
(18) আর ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা বলে: ‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তাঁর প্রিয়পাত্র।’ (হে রাসূল! দাবি খণ্ডন করে) তুমি বলো: ‘তবে তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন কেন? বরং তোমরা তো সে রকমই মানুষ, যেমন তিনি অন্যান্য মানুষ সৃষ্টি করেছেন।’ তিনি যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছে শাস্তি দেন। আর আসমানসমূহ ও জমিনে এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। আর সবাইকে তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে ।
(19) হে (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান) আহলে কিতাব! তোমাদের নিকট আমার রাসূল (মুহাম্মাদ) এসেছে, দীর্ঘকাল রাসূলগণের আগমন বন্ধ থাকার পরে, সে তোমাদের কাছে (দীনের সকল বিষয়) সুস্পষ্ট বর্ণনা করছে, যেন তোমরা (ওযর-আপত্তি করে) বলতে না পারো যে, ‘আমাদের নিকট কোন সুসংবাদদাতা কিংবা সতর্ককারী আসেনি।’ অবশ্যই তোমাদের নিকট সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী (মুহাম্মাদ) এসেছে। আর আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
(20) আর (হে রাসূল! স্মরণ করো সে সময়ের কথা) যখন মূসা তার জাতিকে বলল: ‘হে আমার জাতি, স্মরণ কর তোমাদের ওপর আল্লাহর নি‘আমতের কথা, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে নবী বানিয়েছেন এবং তোমাদেরকে রাজা-বাদশাহ বানিয়েছেন। আর তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন এমন কিছু যা (তোমাদের সমকালীন) সৃষ্টিকুলের কাউকে দান করেননি।’
(21) হে আমার জাতি, তোমরা পবিত্র ভূমিতে (বায়তুল-মাক্বদাসে) প্রবেশ করো, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং তোমরা পেছনে হটে যেয়ো না। তাহলে (দুনিয়া ও আখিরাতে) ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।’
(22) তারা (বানূ ইসরাঈল) বলল: ‘হে মূসা, নিশ্চয় সেখানে রয়েছে এক (যুদ্ধবাজ) শক্তিশালী জাতি এবং আমরা সেখানে কিছুতেই প্রবেশ করবো না, যতক্ষণ না তারা সেখান থেকে বের হয়। অতঃপর যদি তারা সেখান থেকে বের হয়, তবে নিশ্চয় আমরা প্রবেশ করবো।’
(23) যারা ভয় করত তাদের মধ্যে দুজন, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন, তারা (তার সম্প্রদায়কে) বলল: ‘তোমরা (সাহস করে) তাদের মোকাবিলা করে দরজায় প্রবেশ করো, প্রবেশ করলেই তোমরা বিজয়ী হবে। আর আল্লাহর ওপরই তোমরা তাওয়াক্কুল ( ভরসা) করো, যদি তোমরা মু’মিন হও।
(24) তারা বলল: ‘হে মূসা, আমরা সেখানে (শহরে) কখনো প্রবেশ করবো না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকে। (এটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।) সুতরাং, তুমি ও তোমার রব যাও এবং (শক্তিধরদের বিরুদ্ধে) লড়াই করো। আমরা (তোমার সাথে যুদ্ধে না গিয়ে) এখানেই বসে থাকব।’
(25) সে (মূসা) বলল: ‘হে আমার রব, আমি আমার ও আমার ভাই (হারূন) ছাড়া কারো ওপর আমার অধিকার নেই। সুতরাং আপনি আমাদের ও ফাসিক (পাপাচারী) সম্প্রদায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ (ফায়সালা) করে দিন।
(26) তিনি (আল্লাহ) বললেন: ‘তাহলে নিশ্চয় তা (বায়তুল মাকদাসে প্রবেশ) তাদের জন্য (আগামী) চল্লিশ বছর নিষিদ্ধ করা হলো; তারা জমিনে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে থাকবে। সুতরাং তুমি ফাসিক সম্প্রদায়ের জন্য আফসোস করো না।’
(27) আর (হে রাসূল!) তুমি আদমের দুই পুত্রের (হাবীল ও কাবীলের) সংবাদ (কাহিনী) তাদের কাছে যথাযথভাবে বর্ণনা করো, যখন তারা উভয়ে (আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে) কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে (হাবীলের কুরবানী) কবুল করা হলো, আর অপরজন থেকে কবুল করা হলো না। সে (কাবীল) বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করবো।’ অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী) মুত্তাকীদের থেকে কবুল করেন।’
(28) (হাবীল বলল:) ‘তুমি আমাকে হত্যা করার জন্য তোমার হাত বাড়ালেও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার প্রতি আমার হাত বাড়াবো না। নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহকে ভয় করি।’
(29) ‘নিশ্চয় আমি চাই যে, তুমি আমার ও তোমার (উভয়েরই) পাপ নিয়ে (জাহান্নামে) ফিরে যাও, ফলে তুমি জাহান্নামের অধিবাসী হও। আর সেটিই হচ্ছে, যালিমদের প্রতিদান।’
(30) অতঃপর তার (কাবীলের) প্রবৃত্তি তার ভাইকে হত্যা করতে প্ররোচিত করলো। ফলে সে তাকে হত্যা করলো। এভাবে সে (দুনিয়া ও আখিরাতে স্থায়ীভাবে) ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হলো।
(31) অতঃপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন, যে তার ভাইয়ের মৃতদেহ কীভাবে গোপন করা যায়, তা দেখানোর জন্য মাটি খুঁড়তে লাগল। সে (এ দৃশ্য দেখে সে নিজেকে ধিক্কার দিয়ে) বলল: ‘হায় আফসোস! আমি তো এই কাকটির মতোও হতে পারলাম না, যাতে আমার ভাইয়ের লাশ গোপন করতে পারি? অতঃপর সে (নিজের কৃতকর্মের জন্যে) লজ্জিত হলো।
(32) এ কারণেই (কাবীল তার ভাইকে হত্যা করার দরুন), আমি বানূ ইসরাঈলের ওপর এই হুকম দিলাম যে, কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার কারণ ছাড়াই যদি কেউ কাউকে হত্যা করে(১), সে যেন সব মানুষকে হত্যা করলো। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের নিকট আমার রাসূলগণ (বানূ ইসরাঈলের কাছে) সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিল। তা সত্ত্বেও তাদের অনেকেই জমিনে অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।
(33) যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং জমিনে (হত্যা, ছিনতাই ও ডাকাতি প্রভৃতির মাধ্যমে) ফ্যাসাদ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি কেবল এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে(১) অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহাশাস্তি।
(34) তবে তারা ছাড়া, যারা তোমাদের হাতে ধরা পড়ার আগেই তাওবা করে (তাদের জন্যে এ শাস্তি প্রযোজ্য নয়)। সুতরাং তোমরা জেনে রাখো যে, (তাওবা করার পর তাদের প্রতি) আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(35) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে) ভয় করো এবং (আদিষ্ট কাজ করা ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে) তাঁর নৈকট্য অন্বেষণ করো। আর তাঁর রাস্তায় (কাফিরদের বিরুদ্ধে) জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
(36) নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে, জমিনে যা আছে, তার সবটুকুও যদি তাদের হয় এবং এর সাথে যদি সমপরিমাণও থাকে, কিয়ামতের দিন শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে মুক্তিপণ হিসেবে তা দিতে চাইলেও তাদের থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(37) তারা আগুন (জাহান্নাম) থেকে বের হতে চাইবে; কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হবার নয় এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।
(38) আর (হে বিচারকরা! তোমরা) পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের (উভয়ের) হাত কেটে দাও; তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিস্বরূপ। আর আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(39) অতঃপর যে তার এ (জঘন্য) যুলমের পর (চুরি থেকে বিরত থেকে আল্লাহর কাছে) তাওবা করবে এবং নিজেকে সংশোধন করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।(১) নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(40) (হে রাসূল!) তুমি কি জান না যে, নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা (ইনসাফের ভিত্তিতে) আযাব দেন এবং যাকে ইচ্ছা (স্বীয় অনুগ্রহে) ক্ষমা করেন। আর আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
(41) হে রাসূল! তোমাকে যেন তারা (মুনাফিকরা) চিন্তিত না করে, যারা কুফরীর দিকে দ্রুত এগিয়ে যায়– যারা মুখে বলে, ‘ঈমান এনেছি’; অথচ তাদের অন্তর ঈমান আনেনি এবং যারা ইয়াহূদী তারা (সকলেই) মিথ্যা শুনতে অধিক তৎপর, তোমার কাছে আসেনি এমন এক ভিন্ন দলের পক্ষে যারা কান পেতে তোমার কথা শুনে থাকে। তারা (তাওরাতে থাকা) শব্দগুলো যথাযথ সুবিন্যস্ত থাকার পরও সেগুলোর অর্থ বিকৃত করে। তারা অন্যদেরকে বলে: ‘(মুহাম্মাদ) এরূপ বিধান দিলে গ্রহণ করো এবং এরূপ বিধান না দিলে, বর্জন করো।’ আর আল্লাহ যাকে ফিতনায় ফেলতে চান, তার জন্য আল্লাহর কাছে তোমার কিছুই করার নেই। এরাই হচ্ছে সেসব (ইয়াহূদী ও মুনাফিক) লোক, যাদের অন্তরগুলোকে আল্লাহ পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ায় লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য রয়েছে আখিরাতে মহা শাস্তি।
(42) তারা (ইয়াহূদীরা) মিথ্যা শুনতে খুবই আগ্রহী, হারামে (সুদ, ঘুষে) আসক্ত। সুতরাং যদি তারা তোমার কাছে (বিচার-ফয়সালার জন্যে) আসে, তবে তাদের মধ্যে ফয়সালা করো অথবা তাদেরকে উপেক্ষা করো (এটি তোমার এখতিয়ার)। আর যদি তাদেরকে উপেক্ষা করো, তবে তারা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি তুমি তাদের মাঝে বিচার-ফয়সালা করো, তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন।
(43) আর কীভাবে তারা তোমাকে ফয়সালাকারী বানায়; অথচ তাদের কাছে রয়েছে তাওরাত, যাতে রয়েছে আল্লাহর বিধানাবলী? তা সত্ত্বেও তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বস্তুত তারা মু’মিনও নয়।
(44) নিশ্চয় আমি (মূসার উপর) তাওরাত নাযিল করেছি। তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো (জ্ঞান)। নবীগণ, যারা ছিলেন অনুগত, তারা ইয়াহূদীদেরকে তদনুসারে হুকুম দিতেন। আর রাব্বানী ও বিদ্বানগণও (তদনুসারে হুকুম দিতেন)। কারণ তাদেরকে বানানো হয়েছিলো আল্লাহর কিতাবের (সকল ধরনের পরিবর্তন ও বিকৃতি থেকে) হিফাযতকারী এবং (উপরন্তু) তারা ছিল (এর সত্যতার ব্যাপারে) এর ওপর সাক্ষী। কাজেই তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য ক্রয় করো না। আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না, তারাই কাফির।
(45) আর আমি এতে (তাওরাতে) তাদের (ইয়াহূদীদের) ওপর অত্যাবশ্যক করে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান ও দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে সমপরিমাণ জখম (কিসাস নেওয়া হবে)। অতঃপর যে ব্যক্তি তা (অপরাধীর অপরাধ) ক্ষমা করে দিবে, তবে তা তার জন্য (গুনাহের) কাফফারা হবে। আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না, তারাই যালিম।
(46) আর আমি তাদের পেছনে (বানূ ইসরাঈলের নবীদের পরপরই) মারইয়াম পুত্র ‘ঈসাকে পাঠিয়েছিলাম, তার সামনে তাওরাত থেকে যা বিদ্যমান রয়েছে, তার সত্যতা প্রতিপন্নকারীরূপে এবং তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জীল। এতে রয়েছে হিদায়াত ও আলো এবং তা ছিল তার সামনে অবশিষ্ট তাওরাতের সত্যায়নকারী, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত ও উপদেশস্বরূপ।
(47) আর (আমার নির্দেশ ছিল যে) ইঞ্জীলের অনুসারীগণ (খ্রিস্টানরা) যাতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে (মুহাম্মাদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত) বিচার-ফয়সালা করে। আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক (পাপাচারী)।
(48) আর (হে মুহাম্মাদ) আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব (আলকুরআন) নাযিল করেছি, যা তার পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও সেগুলোর হেফাযতকারী। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করো এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য নির্ধারণ করেছি শারী‘আত ও সুস্পষ্ট পন্থা। আর আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তবে তোমাদেরকে এক উম্মত বানাতেন; কিন্তু (সেটা না করে) তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করো। (মনে রেখো) আল্লাহর দিকেই তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে।
(49) আর (হে রাসূল!) আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি সে অনুযায়ী তাদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করো এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো, যাতে আল্লাহ তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তারা তার কিয়দংশ থেকে তোমাকে বিচ্যুত করতে না পারে। অতঃপর তারা যদি (আল্লাহর ফায়সালা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখো, আল্লাহ তো কেবল তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণেই (দুনিয়াতে ও আখিরাতে) শাস্তি দিতে চান। আর নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই তো ফাসিক (আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে)।
(50) তবে কি তারা (তোমার ফায়সালা থেকে বিমুখ হয়ে) জাহিলিয়্যাতের বিচার-ফায়সালা কামনা করে? আর দৃঢ় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে আর কে শ্রেষ্ঠতর?
(51) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ (কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বের কারণে) যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।
(52) সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি দেখতে পাবে, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা (মুনাফিকরা) কাফিরদের কাছে (বন্ধুত্বের জন্য) ছুটাছুটি করছে। তারা বলে: ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে, কোন বিপদ আমাদেরকে আক্রান্ত করবে।’ কিন্তু অচিরেই আল্লাহ (তোমাদেরকে চূড়ান্ত) বিজয় বা তাঁর কাছ থেকে এমন কিছু দিবেন(১), যাতে তারা তাদের অন্তরে যা গোপন রেখেছিল, সে জন্য লজ্জিত হবে।
(53) আর মু’মিনগণ (মুনাফিকদের এ অবস্থা দেখে) বলবে: ‘এরাই কি তারা, যারা আল্লাহর নামে দৃঢ়ভাবে শপথ করেছিল যে, নিশ্চয় তারা (ঈমান, সাহায্য-সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে) তোমাদের সঙ্গেই আছে?’ তাদের আমলসমূহ নিষ্ফল হয়েছে; ফলে তারা (তাদের জন্য প্রস্তুতকৃত জাহান্নামের শাস্তির কারণে) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
(54) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ তার দীন থেকে ফিরে গেলে(১) (আল্লাহর কোনো ক্ষতি নাই) তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন সম্প্রদায়কে (জীবন ব্যস্থার মধ্যে) আনবেন, যাদেরকে তিনি (তাদের ধর্মের উপর অটলতার দরুন) ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। তারা মু’মিনদের প্রতি কোমল এবং কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে। আল্লাহর রাস্তায় তারা জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
(55) (হে মু’মিনগণ! জেনে রাখো) তোমাদের বন্ধু (অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক) কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ- যারা সালাত কায়িম করে, যাকাত প্রদান করে এবং তারা (আল্লাহর প্রতি) সদা বিনীত।
(56) আর যে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তবে (তারা জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।
(57) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান) তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দীনকে হাসি-তামাশা ও খেলার বস্তুরূপে গ্রহণ করে তাদেরকে ও কাফিরদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। আর (বন্ধুত্ব গ্রহণের ব্যাপারে) আল্লাহকে ভয় করো; যদি তোমরা প্রকৃত মু’মিন হয়ে থাকো।
(58) আর যখন তোমরা সালাতের দিকে (মু’মিনদেরকে) ডাকো (আযান দাও), তখন তারা একে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করে। তা এই কারণে যে, তারা এমন সম্প্রদায়, যারা (আল্লাহর ইবাদত এবং তাঁর শারী‘আতের মর্ম) বুঝে না।
(59) (হে রাসূল) বল: ‘হে (ঠাট্টাকারী) আহলে কিতাব, তোমরা কেবল এ কারণেই কি আমাদের থেকে প্রতিশোধ নিবে যে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে (কুরআনের প্রতি) এবং (যা আমাদের) পূর্বে নাযিল হয়েছে (১), সেগুলোর প্রতি? আর নিশ্চয় তোমাদের অধিকাংশ ফাসিক (আল্লাহর আদেশ অমান্যকারী)।’
(60) (হে রাসূল! তাদেরকে) বল: ‘আমি কি তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে এর চেয়েও নিকৃষ্ট পরিণতির সংবাদ দিবো কি? (তারা হলো মূলত এদেরই পূর্বসূরি) যাকে আল্লাহ লা‘নত দিয়েছেন এবং যার উপর তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন? আর যাদের কাউকে তিনি (আকৃতি পরিবর্তন করে) বানর ও কাউকে শূকর বানিয়েছেন এবং তারা তাগূতের(১) উপাসনা করেছে। তারাই অবস্থানের দিক থেকে নিকৃষ্ট এবং সরল-সঠিক পথ থেকে সর্বাধিক বিচ্যুত।‘
(61) আর যখন তারা (মুনাফিকরা) তোমাদের নিকট আসে, তখন বলে: ‘আমরা ঈমান এনেছি’; অথচ তারা কুফরী নিয়েই প্রবেশ করেছে এবং তা নিয়েই বেরিয়ে গেছে। আর আল্লাহ সে (কুফরী) সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত, যা তারা গোপন করে।
(62) আর (হে রাসূল!) তাদের (ইয়াহূদী ও মুনাফিকদের) অধিকাংশকে তুমি দেখবে পাপ, সীমালঙ্ঘন ও হারাম পন্থায় মানুষের সম্পদ ভক্ষণে তৎপর। তারা যা করে, তা কতই না নিকৃষ্ট!
(63) তাদের (ইয়াহূদীদের) নেতা ও আলিমগণ (পণ্ডিতগণ) কেন তাদেরকে পাপ কথা বলা ও অবৈধ খাওয়া থেকে নিষেধ করে না? এরা যা করছে, নিশ্চয়ই তা কতই না নিকৃষ্ট!
(64) আর (দুর্ভিক্ষ ও অভাব দেখা দিলে) ইয়াহূদীরা বলে: ‘(দানখয়রাত ও কল্যাণ প্রদানে) আল্লাহর হাত সংকুচিত’ (তিনি কৃপণ)। মূলত তাদের হাতই (দান ও মানুষের কল্যাণ সাধনে) আবদ্ধ করা হয়েছে এবং তারা যা বলে, সে জন্য তারা অভিশপ্ত। বরং আল্লাহর উভয় হাতই (দান ও কল্যাণে) অবাধ প্রসারিত; যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন। আর (হে নবী! প্রকৃত ঘটনা হলো) তোমার রবের কাছ থেকে যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে, তা অবশ্যই তাদের (ইয়াহূদীদের) অনেকের অবাধ্যতা ও কুফরী বৃদ্ধি করবে। ফলে আমি তাদের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঢেলে দিয়েছি। যখনই তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালায় তখনই আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন এবং তারা দুনিয়ায় বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালোবাসেন না।
(65) আর যদি আহলে কিতাব (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা) ঈমান আনত এবং (পাপ থেকে দূরে থেকে) আল্লাহকে ভয় করত, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের পাপসমূহ মুছে দিতাম এবং তাদেরকে নি‘আমতে পরিপূর্ণ জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাতাম।
(66) আর যদি তারা (ইয়াহূদীরা ও খ্রিস্টানরা) তাওরাত, ইঞ্জীল এবং (এখন) তাদের নিকট তাদের রবের পক্ষ থেকে যা (যে আলকুরআন) নাযিল করা হয়েছে, তা কায়িম করতো, তবে অবশ্যই তারা আহারাদি (জীবিকা) লাভ করত তাদের ওপর (আসমান) থেকে এবং তাদের পায়ের নীচ (যমীন) থেকে(১)। তাদের মধ্যে একদল আছে মধ্যপন্থি (সঠিক পথের অনুসারী), তবে তাদের অনেকেই যা করছে, তা কতই না নিকৃষ্ট!
(67) হে রাসূল! তোমার রবের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তা (মানুষের কাছে) পৌঁছে দাও। যদি না করো, তবে তো তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
(68) (হে রাসূল!) বল: ‘হে আহলে কিতাব, তোমরা কোনো ভিত্তির (ধর্মের) ওপর নেই; যতক্ষণ না তোমরা তাওরাত, ইঞ্জীল ও তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা (যে আলকুরআন) নাযিল করা হয়েছে, তা কায়িম (প্রতিষ্ঠা) করো। আর (হে রাসূল!) তোমার নিকট তোমার রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা তাদের অনেকের (আহলে কিতাবের) অবাধ্যতা ও কুফরী বৃদ্ধি করবে। সুতরাং তুমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্য আফসোস (দুঃখ) করো না।(১)
(69) নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে (মু’মিনগণ), যারা ইয়াহূদী হয়েছে, সাবিয়ী(১) ও খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।(২)
(70) অবশ্যই আমি বানূ ইসরাঈলের কাছ থেকে (শোনা ও আনুগত্য করার) অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তাদের কাছে অনেক রাসূল পাঠিয়েছিলাম। যখনই কোনো রাসূল তাদের কাছে এমন কিছু (বিধান) নিয়ে আসতো, যা তাদের মনঃপূত হতো না, তখনই তারা তাঁদের কতককে মিথ্যাবাদী বলে প্রত্যাখ্যান করত (অস্বীকার করত) এবং কতককে হত্যা করত।
(71) আর তারা ভেবেছে যে, তাদের কোন বিপর্যয় (শাস্তি) হবে না।(১) ফলে তারা অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছে।(২) অতঃপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেছেন। অতঃপর তাদের অনেকে অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছে। আর তারা যা আমল করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
(72) অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলে: ‘নিশ্চয় মারইয়াম পুত্র মাসীহই আল্লাহ।’ অথচ মাসীহ (নিজেই তাদেরকে) বলেছিলো: ‘হে বানূ ইসরাঈল! তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো। বস্তুত যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে, তার ওপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।’
(73) অবশ্যই তারা (খ্রিস্টানরা) কুফরী করেছে, যারা বলে: ‘নিশ্চয় আল্লাহ তিন জনের মধ্যে তৃতীয়জন।’(১) যদিও এক ইলাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আর যদি তারা যা (যে নিকৃষ্ট কথা) বলছে, তা থেকে বিরত না হয়, তবে অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে।
(74) তবে তারা কি (তাদের নিকৃষ্ট কথা থেকে তাওবা করে) আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আর আল্লাহ তো অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(75) মারইয়াম পুত্র মাসীহ শুধু একজন (আল্লাহর) রাসূল। তার পূর্বেও (তার মতো) অনেক রাসূল গত হয়েছে এবং তার মা ছিল অতি সত্য নিষ্ঠা নারী। তারা উভয়ে খাওয়া-দাওয়া করত।(১) (হে রাসূল!) দেখো, কীভাবে আমি তাদের জন্য (আল্লাহর একত্ববাদের) আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট বর্ণনা করছি। অতঃপর (হে রাসূল! আবার) দেখো, কীভাবে তাদেরকে সত্য বিমুখ করা হচ্ছে।
(76) (হে রাসূল! আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাতকারীদেরকে) বলো: ‘তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কারো ইবাদত করো, যার ক্ষমতা নেই, তোমাদের কোন ক্ষতি বা উপকার করার? অথচ আল্লাহই সবকিছু শোনেন ও জানেন।
(77) (হে রাসূল! তুমি খ্রিস্টানদেরকে) বলো: হে আহলে কিতাব! তোমরা সত্যের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাদের ধর্মের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না।(১) আর সে সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা ইতঃপূর্বে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করেছে। আর তারা সরল-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।
(78) বানূ ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তারা দাঊদ ও মারইয়াম পুত্র ‘ঈসার মুখে (যাবূর ও ইঞ্জীলে) অভিশপ্ত হয়েছে। তা এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা করেছিল এবং তারা সীমালঙ্ঘন করতো।(১)
(79) তারা পরস্পরকে গর্হিত কাজ থেকে নিষেধ করত না, যা (পাপকর্ম) তারা করত। তারা যা করত, তা কতই না নিকৃষ্ট!
(80) (হে রাসূল!) তুমি তাদের অনেককে (ইয়াহূদীকে) কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবে। তাদের অন্তর নিজেদের জন্যে যা পেশ করেছে(১) তা কত নিকৃষ্ট যে, আল্লাহ তাদের ওপর রাগান্বিত হয়েছেন। আর তারা (জাহান্নামের) আযাবেই চিরস্থায়ী হবে।
(81) আর যদি তারা (ইয়াহূদীরা) আল্লাহ ও এই নবীর (মুহাম্মাদের) প্রতি এবং যা (আলকুরআন) তার নিকট নাযিল করা হয়েছে, তার প্রতি (সত্যিই) ঈমান রাখত, তবে তাদেরকে (কাফিরদেরকে) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের অনেকেই ফাসিক (আল্লাহর আনুগত্য ত্যাগকারী)।
(82) (হে রাসূল!) অবশ্যই তুমি মু'মিনদের জন্য মানুষের মধ্যে কঠোর শত্রুতা পোষণকারী পাবে ইয়াহূদীদেরকে এবং মুশরিকদেরকে। আর মু’মিনদের জন্য বন্ধুত্বে তাদের মধ্যে কাছাকাছি পাবে তাদেরকে, যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’ (খ্রিস্টান)। তা এই কারণে যে, তাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিত (ইবাদাতকারী আলিম) ও সংসারবিরাগী (দরবেশ) আছে এবং তারা নিশ্চয় অহংকার করে না।
(83) আর এই রাসূলের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে যখন তারা (নাযযাশী ও তার সাথীরা) তা (আলকুরআন) শুনে, তখন সত্য উপলব্ধির কারণে তুমি দেখবে তাদের চোখ অশ্রুসিক্ত। তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি।(১) সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের (উম্মতে মুহাম্মাদীর) সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন।’
(84) আর (তারা আরো বলে) আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যে সত্য (আলকুরআন) আমাদের কাছে (মুহাম্মাদ নিয়ে) এসেছে তার প্রতি ঈমান আনবো না? অথচ আমরা আশা করি যে, আমাদের রব আমাদেরকে সৎকর্মশীল সম্প্রদায়ের সাথে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবেন।
(85) অতঃপর তাদের এ কথার (ঈমানের সাক্ষ্য ও সত্যের স্বীকৃতির) কারণে আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কার দিয়েছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে নদ-নদী-ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। আর এটা সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কার।
(86) এবং যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করেছে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী।
(87) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! আল্লাহ যে সব পবিত্র বস্তু (খাদ্য, পানীয় ও বিবাহ প্রভৃতি) তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং তোমরা (এ বিষয়ে কোনো রকম) সীমালঙ্ঘন করো না।(১) নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।
(88) আর আল্লাহ তোমাদেরকে যে হালাল ও উৎকৃষ্ট রিযক দিয়েছেন, তা থেকে খাও এবং আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে) ভয় করো, যাঁর প্রতি তোমরা ঈমান এনেছো।
(89) তোমাদের অর্থহীন (অনিচ্ছাকৃত) শপথের জন্যে আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না; কিন্তু যে শপথ তোমরা জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে করো সে শপথের জন্যে তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। সুতরাং এর (এ ধরনের শপথ ভঙ্গের) কাফফারা হলো: দশ জন মিসকীনকে মধ্যম ধরনের খাবার খাওয়ানো, যা তোমরা তোমাদের পরিবারকে খাইয়ে থাকো, অথবা তাদেরকে (মধ্যম ধরনের দশটি) বস্ত্র দান করা, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। অতঃপর যে (উক্ত তিন প্রকারের কোনটিই) সামর্থ্য রাখে না, তবে সে তিন দিন সিয়াম পালন করবে। তোমরা শপথ করলে এটাই তোমাদের শপথের কাফফারা। আর তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করো। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাঁর আয়াতসমূহ (শপথের কাফফারার বিধানসমূহ) সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।
(90) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক করার তীরসমূহ-এগুলো সবই ঘৃণার বস্তু, শয়তানের (প্ররোচনামূলক) কাজ। কাজেই তোমরা এগুলো পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
(91) শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর যিকর ও সালাত থেকে বাঁধা দিতে। তবে কি তোমরা (এসব অসৎ কাজ থেকে) বিরত হবে না?
(92) আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং আনুগত্য করো রাসূলের। আর তোমরা (তাঁদের বিরোধিতা থেকে) সতর্ক থাকো। কিন্তু তোমরা যদি (তাদের আনুগত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রাখো, আমার রাসূলের দায়িত্ব শুধু (আল্লাহর বার্তাসমূহ) সুস্পষ্টভাবে প্রচার করা।
(93) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, তারা (মদ হারাম হওয়ার) আগে যা কিছু পানাহার করেছে, তাতে কোন পাপ নেই; (তবে শর্ত হচ্ছে) যদি তারা তাকওয়া অবলম্বন করে(১), ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে। তারপর তারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও ঈমান আনে। এরপরও তারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং ইহসানের পথ অবলম্বন করে(২)। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।
(94) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! (ইহরাম অবস্থায়) আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন (স্থলভাগের) শিকারের এমন বস্তু দ্বারা, যা তোমাদের হাত ও বর্শা নাগাল পায়, যাতে আল্লাহ জেনে নেন কে তাঁকে না দেখেও ভয় করে। সুতরাং এরপর যে সীমালঙ্ঘন করবে(১) তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(95) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! ইহরামে থাকা অবস্থায় তোমরা (স্থলভাগে) শিকার-জন্তু হত্যা করো না এবং যে তোমাদের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে তা হত্যা করবে, তার বিনিময় হলো যা হত্যা করেছে, তার অনুরূপ গৃহপালিত পশু- যা ফয়সালা (নির্ধারণ) করবে তোমাদের মধ্যে দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি- (আর সেটি) হাদঈরূপে ( হজ্জের সময়ে কুরবানীর জন্য ব্যবহৃত পশু ) কা’বায় পৌঁছতে হবে অথবা সেটার কাফফারা হবে (উক্ত পশুর মূল্যমানের খাদ্য) মিসকীনকে খাবার দান করা, অথবা সমান সংখ্যক সিয়াম পালন করা(১), যাতে সে নিজ কর্মের (ইহরাম অবস্থায় শিকারের) শাস্তি ভোগ করে। (ইহরাম অবস্থায় স্থলভাগের শিকার হারাম হওয়ার পূর্বে) যা গত হয়েছে, আল্লাহ তা ক্ষমা করেছেন। (তবে এটি হারামের পর) কেউ পুনরায় (শিকার) করলে, আল্লাহ তার থেকে প্রতিশোধ নিবেন। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
(96) (ইহরাম অবস্থায়) তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সেখানের খাদ্য (সাগরের জীবিত অথবা মৃত প্রাণী) হালাল করা হয়েছে; তোমাদের ও মুসাফিরদের ভোগ্যসামগ্রী হিসেবে। তবে যতক্ষণ তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাকো স্থলভাগের শিকার তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে । আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর কাছে তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।
(97) আল্লাহ সম্মানিত গৃহ কা‘বাকে, সম্মানিত মাসকে(১), হাদঈ(২) ও কালায়িদকে(৩) মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারিত করেছেন। এটা এ জন্য যে, তোমরা যেন জানতে পার, আসমানসমূহে যা আছে এবং যমীনে যা আছে, আল্লাহ তা জানেন। আর আল্লাহ সব কিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
(98) (হে মানুষ!) তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর অবাধ্যদের) শাস্তি দানে কঠোর। আর নিশ্চয় আল্লাহ (তাওবাকারীদের জন্যে) পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
(99) (আল্লাহর বার্তা) প্রচার করাই রাসূলের দায়িত্ব। আর তোমরা যা প্রকাশ করো এবং যা গোপন রাখো, আল্লাহ তা জানেন।
(100) (হে রাসূল! তুমি তাদেরকে) বলো: ‘অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়; যদিও অপবিত্রের আধিক্য তোমাকে মুগ্ধ করে। অতএব হে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা (জান্নাত পেয়ে) সফলকাম হতে পারো।’
(101) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমরা (রাসূলকে অপ্রয়োজনীয়) এমন বিষয়াবলি সম্পর্কে প্রশ্ন করো না, যা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দিবে। আর আলকুরআন অবতীর্ণকালে যদি তোমরা সে সম্পর্কে প্রশ্ন করো, তাহলে তা তোমাদের জন্য প্রকাশ করা হবে। (আগে যা হয়েছে) আল্লাহ তা ক্ষমা করেছেন (সেসব বিষয় এড়িয়ে গেছেন)। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল।
(102) তোমাদের পূর্বে একটি সম্প্রদায় এ ধরনের প্রশ্ন করেছিল; তারপর তারা এর কারণে কাফির হয়ে গেল।(১)
(103) বাহীরাহ্(১), সায়িবাহ্(২), ওছীলাহ্(৩) ও হাম(৪) আল্লাহ নির্ধারণ করেননি; কিন্তু কাফিররা আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে। আর তাদের অধিকাংশই (হক ও বাতিলের প্রার্থক্যটাই) জানে না (জ্ঞানহীন)।
(104) আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘(হালাল-হারাম চতুষ্পদ জন্তু চেনার জন্যে) আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার দিকে ও রাসূলের (সুন্নাতের) দিকে আসো’, তখন তারা বলে: ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যেটাতে পেয়েছি, সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ অথচ তাদের পিতৃপুরুষরা কিছুই জানত না এবং তারা হিদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না, তারপরেও কি তারা তাদেরই অনুসরণ করবে?(১)
(105) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের দায়-দায়িত্ব তোমাদেরই ওপর। তোমরা যদি হিদায়াতের উপর অটল থাকো, তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে, সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহর দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন। তখন তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন তোমরা (দুনিয়াতে) যা আমল করতে।
(106) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! যখন তোমাদের কারো কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয়(১), তখন ওসিয়্যাত করার সময় তোমাদের (নিজেদের) মধ্য থেকে দু'জন ন্যায়পরায়ণ (মুসলিম) ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখবে অথবা অন্যদের (অমুসলিমদের) থেকে দু’জন সাক্ষী রাখবে, যদি তোমরা জমিনে সফরে থাকো, অতঃপর তোমাদেরকে মৃত্যুর বিপদ পেয়ে বসে। (সাক্ষীর ব্যাপারে) যদি তোমাদের সন্দেহ হয়, তবে উভয়কে সালাতের পর (সবার সামনে) অপেক্ষমাণ রাখবে। অতঃপর তারা উভয়ে আল্লাহর নামে শপথ করবে যে, ‘আমরা এর বিনিময়ে কোন মূল্য গ্রহণ করব না; যদিও সে আত্মীয় হয়। আর আল্লাহর সাক্ষ্য আমরা গোপন করব না, করলে অবশ্যই আমরা গুনাহগারদের অন্তর্ভুক্ত হব।’
(107) অতঃপর যদি এটা প্রকাশ হয় যে, তারা (সাক্ষীরা) দু’জনই অপরাধে (আত্মসাতে) লিপ্ত হয়েছে, তবে যাদের স্বার্থহানি ঘটেছে, তাদের মধ্য থেকে (মৃত ব্যক্তির) নিকটতম দুজন তাদের স্থলাভিষিক্ত হবে এবং আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলবে: ‘আমাদের সাক্ষ্য অবশ্যই তাদের সাক্ষ্য থেকে অধিকতর সত্য এবং আমরা সীমালঙ্ঘন করিনি (মিথ্যা সাক্ষ্য দেইনি), করলে অবশ্যই আমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব।’
(108) এ পদ্ধতিই(১) বেশী নিকটর যে, তারা সাক্ষ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করবে অথবা তারা (মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীরা) ভয় করবে যে, তাদের (নিকটাত্মীয়দের) শপথের পর (পূর্বোক্ত) শপথ প্রত্যাখ্যান করা হবে। আর তোমরা (সাক্ষ্য দানের ব্যাপারে) আল্লাহকে ভয় করো এবং (আল্লাহর আদেশ মান্য করার নিয়তে) শুনো। আর আল্লাহ ফাসিক (পাপাচারী) সম্প্রদায়কে হিদায়াত দান করেন না।
(109) (হে মানুষ! তোমরা স্মরণ কর) যেদিন আল্লাহ রাসূলগণকে একত্র করবেন, অতঃপর বলবেন: ‘তোমরা (আমার বাণী পৌঁছানোর পরে উম্মতের থেকে) কী ধরনের জবাব পেয়েছিলে? তারা বলবে: ‘এ বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি গায়েব (অদৃশ্য) সম্বন্ধে সবচেয়ে ভাল জানেন।
(110) (স্মরণ করো কিয়ামত দিবসের কথা) যখন আল্লাহ বলবেন: ‘হে মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা, তোমার ওপর ও তোমার মায়ের ওপর আমার নি‘আমত স্মরণ করো, যখন আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম পবিত্র আত্মা (জিবরীল) দিয়ে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে। আর যখন আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম কিতাব (লেখা), হিকমাত (প্রজ্ঞা), তাওরাত ও ইঞ্জীল। আর তুমি যখন আমার আদেশে কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতির মত গঠন করতে এবং তাতে ফুঁক দিতে, ফলে আমার আদেশে তা পাখি হয়ে যেত। আর তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করতে এবং যখন আমার আদেশে তুমি মৃতকে জীবিত বের করতে। আর যখন তুমি স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে তখন আমি বানূ ইসরাঈলকে তোমার থেকে (তোমাকে হত্যা করতে চাইলে, তা থেকে) ফিরিয়ে রেখেছিলাম। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলেছিল: ‘এতো সুস্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।’
(111) আর (তুমি আরো স্মরণ করো আমার নি‘আমতের কথা) যখন আমি হাওয়ারীগণকে এ আদেশ দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার এবং আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনো।’ তারা বলেছিল, ‘আমরা ঈমান আনলাম এবং (হে আমাদের রব) আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা অবশ্যই মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)।
(112) (আরো স্মরণ করো) যখন হাওয়ারীগণ বলেছিল: ‘হে মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা! আপনার রব কি আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য পরিপূর্ণ খাঞ্চা (দস্তরখান) পাঠাতে সক্ষম?’ তিনি বলেছিলেন: ‘(এমন প্রশ্ন করা থেকে) আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো (তবে রিযক অনুসন্ধানে তোমরা নিজেদের রবের উপর ভরসা করো)।
(113) তারা বলল: ‘আমাদের বাসনা, আমরা তা (খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা) থেকে কিছু খাবো এবং (তখন আল্লাহর পরিপূর্ণ কুদরত ও আপনার রিসালাতের ব্যাপারে) আমাদের হৃদয় প্রশান্ত হবে। আর আমরা এ কথা দৃঢ়ভাবে জানব যে, আপনি আমাদেরকে সত্যই বলেছেন। উপরন্তু আমরা এ ব্যাপারে (অনুপস্থিত লোকদের নিকট) সাক্ষী হয়ে থাকবো।
(114) মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা বলল: ‘হে আল্লাহ, হে আমাদের রব! আসমান থেকে আমাদের জন্যে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন। এটা আমাদের এবং আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্যে ঈদ (আনন্দোৎসবের দিন) হবে। উপরন্তু তা আপনার পক্ষ থেকে (প্রেরিত বিষয়ের সত্যতার) এক প্রমাণ হবে। আর আমাদেরকে রিযক দান করুন, আপনিই তো শ্রেষ্ঠ রিযকদাতা।’
(115) তখন আল্লাহ বললেন: ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি তা (খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা) নাযিল করবো। কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে যে কুফরী করবে, তাকে নিশ্চয় আমি এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি সৃষ্টিকুলের কাউকে দিবো না।’
(116) (আরও স্মরণ করো সে সময়ের কথা) যখন (কিয়ামতের দিবসে) আল্লাহ বলবেন: ‘হে মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া আমাকে আর আমার জননীকে দু’জন ইলাহ (উপাস্য) হিসেবে গ্রহণ করো? ‘সে (তার রবের পবিত্রতা বর্ণনা করে) বলবে: ‘আপনিই মহিমান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই, তা বলা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়। যদি আমি তা বলতাম, তাহলে আপনি তো তা জানতেন। আমার অন্তরের কথা তো আপনি জানেন; কিন্তু আপনার অন্তরের কথা আমি জানি না। নিশ্চয় আপনি অদৃশ্য সম্বদ্ধে সবচেয়ে সর্বজ্ঞাত।’
(117) (‘ঈসা তার রবকে বলবে) ‘আমি তাদেরকে কেবল তাই বলেছি, যা আপনি আমাকে আদেশ করেছেন, তা এই যে, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত করো। আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের কাজ-কর্মের সাক্ষী ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে (জীবিতাবস্থায় আসমানে) উঠিয়ে নিলেন, তখন আপনি ছিলেন তাদের কাজ-কর্মের তত্ত্বাবধায়ক (পর্যবেক্ষণকারী)। আর আপনিই সব বিষয়ে সাক্ষী।’
(118) (হে আমার রব) আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারাতো আপনারই বান্দা। আর যদি তাদের (মু’মিনদের) কে ক্ষমা করেন (আপনাকে বাধা দেয়ার তো কেউ নেই), তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(119) আল্লাহ বলবেন: ‘এটা হলো সেই দিন যেদিন (কথা, কাজ ও নিয়তে) সত্যবাদীদের সত্যতা তাদের উপকারে আসবে। তাদের জন্য আছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা (এ প্রতিদান ও আল্লাহর সন্তুষ্টি) মহা সফলতা।
(120) আল্লাহর জন্যই আসমানসমূহ ও জমিন এবং এদুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব (মালিকানা)। আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।