(1) মানুষের উপর কি এমন এক সুদীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়নি যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না?
(2) আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি (পুরুষ ও নারীর) মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, আমি তাকে পরীক্ষা করব(১), ফলে আমি তাকে বানিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।
(3) অবশ্যই আমি তাকে (রাসূলগণের মাধ্যমে) হিদায়াতের পথ প্রদর্শন করেছি, হয় সে (সে পথ অনুসরণ করে) কৃতজ্ঞ হবে অথবা (সে পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে) অকৃতজ্ঞ হবে।
(4) নিশ্চয় আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি শেকল, বেড়ি ও প্রজ্বলিত আগুন।
(5) নিশ্চয় সৎকর্মশীলরা জান্নাতে এমন পানপাত্র থেকে (পবিত্র শরাব) পান করবে যাতে মিশ্রণ করা হবে (সুগন্ধ) কাফূর (কর্পূর)।(১)
(6) এমন এক ঝর্ণা যা থেকে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে, তারা এটিকে যথেচ্ছা প্রবাহিত করবে।
(7) (যেসব বান্দা তা পান করবে) তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যার অকল্যাণ হবে অনেক বিস্তীর্ণ।
(8) তারা খাদ্যের প্রতি (নিজেদের প্রয়োজন ও) আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে।
(9) তারা বলে: ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান চাই না এবং কোন কৃতজ্ঞতাও না।
(10) (তারা বলে:) আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভয়ংকর ভীতিপ্রদ দিবসের ভয় করি।
(11) ফলে আল্লাহ তাদেরকে সেই দিবসের অকল্যাণ থেকে রক্ষা করলেন এবং তাদের প্রদান করলেন উজ্জ্বলতা ও উৎফুল্লতা।
(12) আর (আনুগত্য ও কষ্টের ওপর) তারা যে ধৈর্যধারণ করেছিল তার পরিণামে তিনি তাদেরকে পুরস্কারস্বরূপ প্রদান করবেন জান্নাত ও রেশমি বস্ত্র।
(13) তারা সেখানে সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে থাকবে। তারা সেখানে না দেখবে অতিশয় গরম, আর না অত্যধিক ঠাণ্ডা।
(14) তাদের ওপর (জান্নাতের) গাছের ছায়া ঝুঁকে থাকবে এবং তার ফলমূলের থোকাসমূহ তাদের সম্পূর্ণ আয়ত্তাধীন করা হবে।
(15) আর তাদের চারপাশে ঘুরে ঘুরে (খাবার) পরিবেশন করা হবে রৌপ্য পাত্রে ও স্ফটিক (ক্রিস্টালের মতো) স্বচ্ছ পানপাত্রে-
(16) রূপার ন্যায় স্বচ্ছ স্ফটিক পাত্র; যা পরিবেশনকারীরা (পানকারীদের চাহিদা অনুযায়ী) পরিমাপ করে পূর্ণ করবে।
(17) সেখানে তাদেরকে পান করানো হবে পাত্রভরা আদা-মিশ্রিত সুরা,(১)
(18) জান্নাতের এক ঝর্ণা যার নাম হবে, সালসাবীল (সেখান থেকে তারা পান করবে)।
(19) আর তাদের চারপাশে ঘুরাফেরা করবে চিরকিশোরেরা; তুমি তাদেরকে দেখলে মনে করবে, তারা যেন কতিপয় বিক্ষিপ্ত মুক্তা।
(20) আর তুমি যখন সেখানে দেখবে, তখন দেখতে পাবে নি‘আমতরাজি ও বিশাল সাম্রাজ্য।
(21) তাদের পরনের কাপড় হবে অতি সূক্ষ্ম সবুজ রেশমের পোশাক এবং মোটা রেশমের পোশাক। আর তাদেরকে পরিধান করানো হবে রূপার চুড়ি এবং তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।
(22) (তাদেরকে বলা হবে,) ‘নিশ্চয় এটি তোমাদের পুরস্কার। আর তোমাদের প্রচেষ্টা (আমলসমূহ) ছিল প্রশংসাযোগ্য।’
(23) (হে রাসূল!) নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি পর্যায়ক্রমে আল-কুরআন নাযিল করেছি।
(24) কাজেই তোমার রবের হুকুমের জন্য ধৈর্যধারণ করো এবং তাদের মধ্য থেকে কোন পাপিষ্ঠ বা অকৃতজ্ঞ কাফিরের আনুগত্য করো না।
(25) আর সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রবের নাম স্মরণ করো,
(26) আর রাতের একাংশে (মাগরিব ও ‘ইশা) তার উদ্দেশ্যে সাজদাবনত হও এবং দীর্ঘ রাত ধরে তাঁর তাসবীহ পাঠ করো (তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করো)।
(27) নিশ্চয় এরা (এসব মুশরিকরা) দুনিয়ার জীবনকে ভালোবাসে আর তাদের সামনের এক কঠিন দিনকে (কিয়ামতকে) উপেক্ষা করে চলে।
(28) আমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং তাদের জোড়াগুলো আমিই শক্ত করে দিয়েছি। আর আমি চাইলে (তাদেরকে ধ্বংস করে) তাদের পরিবর্তে অনুরূপ জাতি সৃষ্টি করতে পারি।
(29) নিশ্চয় এটি (এ সূরাটি) উপদেশ; অতএব যে চায় সে তার রবের পথ অবলম্বন করুক।
(30) আর আল্লাহ না চাইলে তোমরা (আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে) ইচ্ছা করতে সক্ষম হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান।
(31) তিনি যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমতে প্রবেশ করাবেন(১) এবং যালিমদের জন্য তিনি প্রস্তুত রেখেছেন (জাহান্নামের) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।