(1) আসমানসমূহে ও জমিনে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করছে এবং তিনি মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(2) আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল(১) তিনিই তাদেরকে (চুক্তি ভঙ্গের কারণে) প্রথমবারের মত তাদের ঘর-বাড়ি (মদীনা) থেকে (সিরিয়ার দিকে) বহিষ্কার করেছিলেন। (হে মু’মিনগণ!) তোমরা ধারণাও করনি যে, তারা (এ সম্মান ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এভাবে তাঁদের দুর্গসমূহ থেকে ) বেরিয়ে যাবে। আর তারা ধারণা করেছিল যে, তাদের দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর (পাকড়াও এবং) শাস্তি থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি এমন এক দিক থেকে আসল যা তারা কল্পনাও করতে পারেনি এবং আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহে এমন ভীষণ ত্রাস সঞ্চার করলেন যে, তারা তাদের বাড়ি-ঘর (ভিতর থেকে) নিজেদের হাতে এবং মু’মিনদের হাতে (বাহির থেকে) ধ্বংস করতে শুরু করল। অতএব হে দৃষ্টিমান লোকেরা! তোমরা (তাদের শাস্তি দেখে) উপদেশ গ্রহণ করো।’
(3) আর যদি আল্লাহ তাদের জন্য নির্বাসন লিপিবদ্ধ না করতেন, তবে তিনি তাদেরকে দুনিয়াতে (হত্যা ও বন্দী করার মাধ্যমে) শাস্তি দিতেন এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি।
(4) এটি (এ শাস্তি) এ জন্য যে, নিশ্চয় তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আর যে কেউ-ই আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁকে শাস্তি প্রদানে অত্যন্ত কঠোর।
(5) (হে মু’মিনরা! বানূন নাদীর যুদ্ধে) তোমরা যে সব খেজুর গাছ কেটে ফেলেছো অথবা সেগুলোকে (না কেটে) তাদের মূলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দিয়েছো, তা তো ছিল আল্লাহর অনুমতিক্রমে(১) এবং যাতে তিনি (অঙ্গীকার ভঙ্গকারী ইয়াহূদী) ফাসিকদের লাঞ্ছিত করতে পারেন।
(6) আর আল্লাহ (বনূ নযীরের) ইয়াহূদীদের নিকট থেকে তাঁর রাসূলকে ফায়(১) হিসেবে যা দিয়েছেন, তোমরা তার জন্য কোন ঘোড়া বা উটে আরোহণ করে অভিযান পরিচালনা করনি। বরং আল্লাহ তাঁর রাসূলগণকে যাদের ওপর ইচ্ছা কর্তৃত্ব (বিজয়) দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।
(7) আল্লাহ জনপদবাসীদের নিকট থেকে তাঁর রাসূলকে ফায় হিসেবে (বিনা যুদ্ধে) যা দিয়েছেন তা আল্লাহর, রাসূলের, (তাঁর) আত্মীয়-স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীন ও মুসাফিরদের, যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে। (হে মু‘মিনগণ!) রাসূল তোমাদের (বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ থেকে) যা দেয় তা গ্রহণ করো এবং যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো। আর আল্লাহকেই (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যন্ত কঠোর।
(8) এই সম্পদ (আরও ব্যয় হবে) নিঃস্ব মুহাজিরগণের জন্য ও যাদেরকে নিজেদের ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তি থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। অথচ এরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির অন্বেষণ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে (জিহাদের মাধ্যমে) সাহায্য করেন। এরাই তো সত্যবাদী (ঈমানদার)।
(9) আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা (যে সব আনসাররা) মদীনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), তারা তাদের কাছে হিজরত করে আসা মুহাজিরদেরকে ভালোবাসে, আর তারা মুহাজিরদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে, সে জন্য তাদের অন্তরে (না পাওয়া জনিত) কোন ঈর্ষা অনুভব করে না এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে (মুহাজিরদেরকে) অগ্রাধিকার দেয়। বস্তুত যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।
(10) আর যারা তাদের পরবর্তীতে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করুন এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।
(11) (হে রাসূল!) তুমি কি মুনাফিকদেরকে দেখনি যারা আহলে কিতাবের (ইয়াহূদীদের) মধ্য হতে তাদের কাফির ভাইদেরকে বলে: ‘তোমাদেরকে (মদীনা থেকে) বের করে দেয়া হলে আমরাও তোমাদের সাথে অবশ্যই বেরিয়ে যাবো এবং তোমাদের (স্বার্থের) ব্যাপারে আমরা কখনোই কারো আনুগত্য করব না। আর তোমাদের সাথে যুদ্ধ করা হলে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে (মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে) সাহায্য করবো।’ আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।
(12) বস্তুত তারা (ইয়াহূদীরা) যদি বহিষ্কৃত হয় তবে মুনাফিকরা কখনো তাদের সাথে দেশত্যাগ করবে না। আর তাদের (ইয়াহূদীদের) সাথে যদি যুদ্ধ করা হয়, তবে এরা (মুনাফিকরা) কখনো তাদেরকে সাহায্য করবে না। আর যদিও তাদেরকে (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) সাহায্য করে তবুও তারা অবশ্যই পিঠ দেখিয়ে পালাবে; এরপর তারা কোন সাহায্যই পাবে না।
(13) প্রকৃতপক্ষে তোমরা তাদের (মুনাফিক ও ইয়াহূদীদের) অন্তরে আল্লাহর চাইতে অধিক বেশি ভয়ের কারণ; এটা এ কারণে যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।
(14) (হে মু‘মিনরা!) তোমাদের বিরুদ্ধে তারা (ইয়াহূদীরা) সম্মিলিতভাবে (সামনাসামনি) যুদ্ধ করবে না, তবে সুরক্ষিত জনপদের মধ্যে অবস্থান করে বা দেয়ালের পেছন হতে (তারা যুদ্ধের সাহস করবে)। তাদের পরস্পরের মধ্যেই তো প্রবল যুদ্ধ।( একে অপরের শত্রু) (মূলত,তারা নিজেরা নিজেদেরকে প্রবল শক্তিধর মনে করে;) তুমি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে করছ; অথচ তাদের অন্তরসমূহ শতধাবিভক্ত (বিচ্ছিন্ন)। এটি এজন্য যে, তারা নির্বোধ সম্প্রদায়।
(15) (কুফরী ও শাস্তির ক্ষেত্রে এ সব ইয়াহূদী ও মুনাফিকদের উদাহরণ হলো) তাদের অব্যবহিত পূর্বসূরিদের (মক্কার মুশরিকদের) ন্যায়, যারা (বদর দিবসে হত্যা ও বন্দির মাধ্যমে) নিজেদের কৃতকর্মের কুফল আস্বাদন করেছে। উপরন্তু তাদের জন্য (পরকালে) রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(16) (এ সব ইয়াহূদী ও মুনাফিকদের আরেকটি উদাহরণ হলো) শয়তান-এর ন্যায়, সে মানুষকে বলেছিল, ‘কুফরী করো।’ অতঃপর যখন সে কুফী করল তখন সে (শয়তান নিজকে দায়মুক্ত ঘোষণা করে) বলল: ‘আমি তোমার থেকে মুক্ত, নিশ্চয় আমি সকল সৃষ্টির রব আল্লাহকে ভয় করি।’
(17) তাদের (শয়তান ও তার অনুসারী) দু’জনের শেষ পরিণতি ছিল এই যে, তারা উভয়েই জাহান্নামী হবে, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। আর এটাই যালিমদের প্রতিফল।
(18) হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহকে (তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে) ভয় করো; আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা, সে আগামীকালের (কিয়ামত দিবসের) জন্য কি প্রেরণ করেছে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যে আমলই করো, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।
(19) তোমরা তাদের মতো হইও না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল; ফলে আল্লাহও তাদেরকে তাদের নিজেদের কথাই ভুলিয়ে দিয়েছেন।(১) আর তারাই হল ফাসিক।
(20) (জেনে রেখো,) জাহান্নামবাসী ও জান্নাতবাসীরা (কখনই) সমান হতে পারে না। জান্নাতবাসীরাই হলো সফলকাম।
(21) আমি এ আল-কুরআনকে যদি পাহাড়ের ওপর নাযিল করতাম, তবে তুমি অবশ্যই তাকে দেখতে, আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। মানুষের জন্য আমি এসব উদাহরণ পেশ করি; যাতে তারা চিন্তাভাবনা করবে (উপদেশ গ্রহণ করে)।
(22) তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ নেই। তিনি অনুপস্থিত-উপস্থিত সব কিছুর জ্ঞান রাখেন। তিনিই পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
(23) তিনিই আল্লাহ; যিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, মহাপবিত্র, ত্রুটিমুক্ত, (রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি দ্বারা) সত্যায়নকারী, (বান্দাদের আমলসমূহের) পর্যবেক্ষক, মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রতাপশালী, অতীব মহিমান্বিত, তারা যা শরীক করে, তা হতে পবিত্র মহান।
(24) তিনিই আল্লাহ, (সব কিছুর) স্রষ্টা, (সর্ব প্রকার বস্তুর) উদ্ভাবক, আকৃতিদানকারী, তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ; আসমান ও জমিনে যা আছে সবই তার মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।